ঢাকা , রবিবার, ০৪ মে ২০২৫, ২০ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
অমুসলিমদের সংগঠনের দাওয়াত দেওয়া জামায়াতে ইসলামীর নিয়মিত কর্মসূচি – মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল রাজশাহী মহানগরীতে পুলিশের অভিযানে আ’লীগ কর্মীসহ গ্রেফতার -২৩ ধর্ষণের আসামি বাপ্পী’কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। দ্বীন প্রতিষ্ঠায় যুব সমাজকে যেকোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে হবে -ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম। দেবীগঞ্জে যুবলীগের সহ সভাপতি গ্রেফতার উল্লাপাড়ার সমাজ উন্নয়ন যুব কল্যান সংস্থা এর উদ্যোগ সম্পূর্ণ নিজস্ব উদ্যোগ বহুল প্রতীক্ষিত রাস্তা সংস্কার করে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি। গৌরীপুরে উদযাপিত হয়েছে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস যুবদল নেতার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুরের আসামীদের বহিস্কার ও গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত  পাবনার ফরিদপুর ডেমরা বাউল শিল্পীদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান বিমানবন্দরে ভীড় না করার আহবান সিলেট বিভাগ বিএনপির

কড়াইল বস্তিতে বিভিন্ন কৌশলে অবাধ মাদক ব্যবসা 

কড়াইল বস্তিতে বিভিন্ন কৌশলে অবাধ মাদক ব্যবসা 

 

সাইফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিবেদক : রাজধানীর বনানী থানার আওতাধীন কড়াইল বস্তিতে বিভিন্ন কৌশলে অবাধ মাদক বিক্রি চলছে। হেরোইনকে ‘কাঁঠাল পাতা’ বলে ডাকা হয়। সাধারণ মানুষ যাতে না বুঝতে পারে, সে জন্য এই সাংকেতিক নাম। ইয়াবাকে বলা হয় ‘পট’ বা ‘গুটি’। গাঁজার নাম ‘সবজি’। কাগজে মুড়িয়ে তিন ধরনের পুরিয়া করে হেরোইন বিক্রি করা হয়। পুরিয়াভেদে এর মূল্য ৫০০, ১ হাজার ২০০ ও ৬ হাজার টাকা। এমন তথ্য উঠে এসেছে একটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে।
একটি সূত্রে জানা গেছে, বস্তিসংলগ্ন এই লেকের পাশের মাটির রাস্তায় হেরোইন বেচাকেনার চারটি স্পট রয়েছে। দুপুরের পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত হেরোইন বেচাকেনা হয়। এ ছাড়া বস্তির বিভিন্ন জায়গায়ও রয়েছে গাঁজার স্পট। তবে ইয়াবা বিক্রির নির্দিষ্ট স্পট নেই। ইয়াবা বিক্রেতারা পকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়ান কিংবা মোবাইল ফোনে অর্ডার পেয়ে ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেন। এই কাজটি করা হয় খুব সতর্কতার সঙ্গে, যাতে ধরা না পড়ে।
বিশাল এলাকা নিয়ে বনানী থানার এই বস্তি কড়াইল নামে পরিচিত হলেও এর মধ্যে রয়েছে পৃথক নামের বস্তি। বেলতলা বস্তি, এরশাদনগর, গোডাউন, বউবাজার, বেদে, মোশারফ বাজার ও জামাইবাজার বস্তিকে একসঙ্গে কড়াইল বস্তি বলা হয়। এই এলাকায় প্রকাশ্যে ইয়াবা, হেরোইন, গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য বেচাকেনা এবং সেবন চললেও যেন দেখার কেউ নেই। মাঝেমধ্যে পুলিশ দুয়েকটি অভিযান চালালেও তাতে কার্যকর কিছু হয় না। আর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রমই নেই বস্তি এলাকায়।
সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বস্তিতে প্রায় সবাই নিম্ন আয়ের মানুষ। সাধারণ বাসিন্দারা তাদের উঠতি বয়সী ছেলেমেয়ে নিয়ে মাদক আতঙ্কে থাকেন, কখন না জানি মাদকে জড়িয়ে পড়ে! তাদের ভাষ্য, বস্তির ভেতর খুব সহজেই মাদক পাওয়া যায়। মাদকসেবীরা বস্তির সরু গলিতে প্রকাশ্যে মাদক সেবন করেন। কিছু গলি আছে, সেগুলোতে সন্ধ্যার পর মাদকের তীব্র গন্ধে হাঁটার উপায় থাকে না। কিন্তু তাদের নিষেধ করার মতো সাহস নেই কারও। খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা ও সোর্সদের যোগসাজশেই চলে মাদক ব্যবসা। পুলিশ ও সোর্সদের টাকা না দিয়ে মাদক ব্যবসা অসম্ভব!
বস্তিবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লেকের পাশের মাটির রাস্তায় সজনে গাছের নিচে যারা হেরোইন বিক্রির জন্য দাঁড়িয়েছিলেন, তারা বস্তির চিহ্নিত মাদক কারবারি মো. রানার লোকজন। রানা তাদের মাধ্যমে হেরোইন বিক্রি করেন। তবে বিক্রেতারা নিজের পকেটে বা হাতে এসব রাখেন না, লেকের কিনারায় কলাগাছের ফাঁকে কিংবা রাস্তার পাশে মাটিচাপা দিয়ে রেখে দেন। ক্রেতার কাছ থেকে একজন টাকা নেন, আরেকজন গোপন জায়গা থেকে হেরোইনের পুরিয়া এনে হাতে তুলে দেন।
তথ্য পাওয়া যায়, জামাইবাজার বস্তিসংলগ্ন নৌকাঘাটের পাশে মাটির রাস্তাসংলগ্ন মো. জাহাঙ্গীরের চায়ের দোকান। দোকানে বসেই সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চা-বিস্কুটের আড়ালে তিনি হেরোইন বিক্রি করেন। দোকানে সিগারেটের খালি প্যাকেটে হেরোইনের পুরিয়া রাখা হয়। এ ছাড়া দোকানসংলগ্ন বাসায়ও থাকে। পরিচিত ক্রেতা ছাড়া তিনি বিক্রি করেন না।
তাঁর ছোট ভাই জিল্লুর রহমানও একই কারবারে জড়িত। সম্প্রতি জিল্লুর যৌথ বাহিনীর হাতে হেরোইনসহ গ্রেপ্তার হলেও আবার জামিনে বেরিয়ে গেছেন। জিল্লুরের কাছে একটি ভুঁইফোড় অনলাইন পত্রিকার পরিচয়পত্র পাওয়া যায়। তিনি নাকি ওই অনলাইন পত্রিকার সম্পাদকের গাড়ি চালক। এরশাদনগর বস্তির মসজিদের গলিতে গাঁজা বিক্রি করেন সাগরের স্ত্রী জরিনা এবং রাজার গলিতে গাঁজা, ইয়াবা, হেরোইন বিক্রি করেন মো. কাঞ্চন। বেলতলা বস্তির আমির, আবুল ও এরশাদের ছেলে রুবেল গাঁজা-ইয়াবা বেচেন। মাছ বাজারের আফাজ ও আসেক, ঝিলপাড়ের ইব্রাহিম ও সাইদুল ইসলাম এবং বউবাজারের খামারবাড়ির শাহীন, ডাক্তারবাড়ির গলির রাসেল ও মোশারফ বাজারের শহিদুল ইয়াবার অন্যতম ব্যবসায়ী। গোডাউন বস্তিতে ইয়াবা, ফেনসিডিল ও গাঁজা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন সোর্স শহীদ। তার সেলার মোহন, স্বপন, ফটিক, কাশেম, ফর্মা হারুন, রাব্বানী।

এ বিষয়ে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাসেল সরোয়ার বলেন, বস্তি এলাকাকে তিনটি ভাগে ভাগ করে পুলিশ কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। তাদের কাজ মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো। এ পর্যন্ত বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মহানগর উত্তর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক শামিম আহম্মেদ বলেন, অভিযান চালানো হয়। মামলাও হয়েছে বেশ কিছু। আবার অভিযান চালাব।
আপলোডকারীর তথ্য

news room

জনপ্রিয় সংবাদ

অমুসলিমদের সংগঠনের দাওয়াত দেওয়া জামায়াতে ইসলামীর নিয়মিত কর্মসূচি – মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল

কড়াইল বস্তিতে বিভিন্ন কৌশলে অবাধ মাদক ব্যবসা 

আপডেট সময় ০৮:০৪:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ মে ২০২৫

 

সাইফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিবেদক : রাজধানীর বনানী থানার আওতাধীন কড়াইল বস্তিতে বিভিন্ন কৌশলে অবাধ মাদক বিক্রি চলছে। হেরোইনকে ‘কাঁঠাল পাতা’ বলে ডাকা হয়। সাধারণ মানুষ যাতে না বুঝতে পারে, সে জন্য এই সাংকেতিক নাম। ইয়াবাকে বলা হয় ‘পট’ বা ‘গুটি’। গাঁজার নাম ‘সবজি’। কাগজে মুড়িয়ে তিন ধরনের পুরিয়া করে হেরোইন বিক্রি করা হয়। পুরিয়াভেদে এর মূল্য ৫০০, ১ হাজার ২০০ ও ৬ হাজার টাকা। এমন তথ্য উঠে এসেছে একটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে।
একটি সূত্রে জানা গেছে, বস্তিসংলগ্ন এই লেকের পাশের মাটির রাস্তায় হেরোইন বেচাকেনার চারটি স্পট রয়েছে। দুপুরের পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত হেরোইন বেচাকেনা হয়। এ ছাড়া বস্তির বিভিন্ন জায়গায়ও রয়েছে গাঁজার স্পট। তবে ইয়াবা বিক্রির নির্দিষ্ট স্পট নেই। ইয়াবা বিক্রেতারা পকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়ান কিংবা মোবাইল ফোনে অর্ডার পেয়ে ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেন। এই কাজটি করা হয় খুব সতর্কতার সঙ্গে, যাতে ধরা না পড়ে।
বিশাল এলাকা নিয়ে বনানী থানার এই বস্তি কড়াইল নামে পরিচিত হলেও এর মধ্যে রয়েছে পৃথক নামের বস্তি। বেলতলা বস্তি, এরশাদনগর, গোডাউন, বউবাজার, বেদে, মোশারফ বাজার ও জামাইবাজার বস্তিকে একসঙ্গে কড়াইল বস্তি বলা হয়। এই এলাকায় প্রকাশ্যে ইয়াবা, হেরোইন, গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য বেচাকেনা এবং সেবন চললেও যেন দেখার কেউ নেই। মাঝেমধ্যে পুলিশ দুয়েকটি অভিযান চালালেও তাতে কার্যকর কিছু হয় না। আর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রমই নেই বস্তি এলাকায়।
সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বস্তিতে প্রায় সবাই নিম্ন আয়ের মানুষ। সাধারণ বাসিন্দারা তাদের উঠতি বয়সী ছেলেমেয়ে নিয়ে মাদক আতঙ্কে থাকেন, কখন না জানি মাদকে জড়িয়ে পড়ে! তাদের ভাষ্য, বস্তির ভেতর খুব সহজেই মাদক পাওয়া যায়। মাদকসেবীরা বস্তির সরু গলিতে প্রকাশ্যে মাদক সেবন করেন। কিছু গলি আছে, সেগুলোতে সন্ধ্যার পর মাদকের তীব্র গন্ধে হাঁটার উপায় থাকে না। কিন্তু তাদের নিষেধ করার মতো সাহস নেই কারও। খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা ও সোর্সদের যোগসাজশেই চলে মাদক ব্যবসা। পুলিশ ও সোর্সদের টাকা না দিয়ে মাদক ব্যবসা অসম্ভব!
বস্তিবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লেকের পাশের মাটির রাস্তায় সজনে গাছের নিচে যারা হেরোইন বিক্রির জন্য দাঁড়িয়েছিলেন, তারা বস্তির চিহ্নিত মাদক কারবারি মো. রানার লোকজন। রানা তাদের মাধ্যমে হেরোইন বিক্রি করেন। তবে বিক্রেতারা নিজের পকেটে বা হাতে এসব রাখেন না, লেকের কিনারায় কলাগাছের ফাঁকে কিংবা রাস্তার পাশে মাটিচাপা দিয়ে রেখে দেন। ক্রেতার কাছ থেকে একজন টাকা নেন, আরেকজন গোপন জায়গা থেকে হেরোইনের পুরিয়া এনে হাতে তুলে দেন।
তথ্য পাওয়া যায়, জামাইবাজার বস্তিসংলগ্ন নৌকাঘাটের পাশে মাটির রাস্তাসংলগ্ন মো. জাহাঙ্গীরের চায়ের দোকান। দোকানে বসেই সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চা-বিস্কুটের আড়ালে তিনি হেরোইন বিক্রি করেন। দোকানে সিগারেটের খালি প্যাকেটে হেরোইনের পুরিয়া রাখা হয়। এ ছাড়া দোকানসংলগ্ন বাসায়ও থাকে। পরিচিত ক্রেতা ছাড়া তিনি বিক্রি করেন না।
তাঁর ছোট ভাই জিল্লুর রহমানও একই কারবারে জড়িত। সম্প্রতি জিল্লুর যৌথ বাহিনীর হাতে হেরোইনসহ গ্রেপ্তার হলেও আবার জামিনে বেরিয়ে গেছেন। জিল্লুরের কাছে একটি ভুঁইফোড় অনলাইন পত্রিকার পরিচয়পত্র পাওয়া যায়। তিনি নাকি ওই অনলাইন পত্রিকার সম্পাদকের গাড়ি চালক। এরশাদনগর বস্তির মসজিদের গলিতে গাঁজা বিক্রি করেন সাগরের স্ত্রী জরিনা এবং রাজার গলিতে গাঁজা, ইয়াবা, হেরোইন বিক্রি করেন মো. কাঞ্চন। বেলতলা বস্তির আমির, আবুল ও এরশাদের ছেলে রুবেল গাঁজা-ইয়াবা বেচেন। মাছ বাজারের আফাজ ও আসেক, ঝিলপাড়ের ইব্রাহিম ও সাইদুল ইসলাম এবং বউবাজারের খামারবাড়ির শাহীন, ডাক্তারবাড়ির গলির রাসেল ও মোশারফ বাজারের শহিদুল ইয়াবার অন্যতম ব্যবসায়ী। গোডাউন বস্তিতে ইয়াবা, ফেনসিডিল ও গাঁজা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন সোর্স শহীদ। তার সেলার মোহন, স্বপন, ফটিক, কাশেম, ফর্মা হারুন, রাব্বানী।

এ বিষয়ে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাসেল সরোয়ার বলেন, বস্তি এলাকাকে তিনটি ভাগে ভাগ করে পুলিশ কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। তাদের কাজ মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো। এ পর্যন্ত বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মহানগর উত্তর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক শামিম আহম্মেদ বলেন, অভিযান চালানো হয়। মামলাও হয়েছে বেশ কিছু। আবার অভিযান চালাব।