নিজস্ব প্রতিবেদক
জুলাই শহীদদের ত্যাগ ও কুরবানীর মর্যাদা রক্ষায় এবং তাদের অসাপ্ত কাজকে সমাপ্ত করতে দেশে ন্যায়-ইনসাফ ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় সকলকে যেকোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকার আহবান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন।
তিনি আজ দুপুরে রাজধানীর উত্তরায় একটি মিলনাতনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত জুলাই শহীদ ও আহতদের জন্য দোয়া অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য জামাল উদ্দিনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত উত্তরা পশ্চিম জোন জামায়াতের সহকারী মাহবুবুল আলম, ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য ও শ্রমিক কল্যাণ ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মাওলানা মহিবুল্লাহ, ঢাকা-১৮ আসনের জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী অধ্যক্ষ আশরাফুল হক, উত্তরা জোনের সহকারী পরিচালক মাহবুবুল হক, উত্তরা মডেল থানা আমীর এডভোকেট ইব্রাহিম খলিল, উত্তরা পশ্চিম থানা আমীর মাজহারুল ইসলাম, উত্তরা পূর্ব থানা আমীর মাহফুজুর রহমান, তুরার মধ্য থানা আমীর গাজী মনির হোসাইন প্রমূখ।
সেলিম উদ্দিন বলেন, জুলাই বিপ্লব আমাদের দেশ ও জাতিকে নতুন করে জীবনী শক্তি দিয়েছে। এ বিপ্লবের প্রেক্ষাপট একদিনে তৈরি হয়নি বরং দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছরের অপশাসন-দুঃশাসনে আওয়ামী ফ্যাসীবাদীদের প্রতি জনগণ বিতৃষ্ণ হয়ে উঠেছিল। ফলে স্বৈরাচারের পতন অনিবার্য হয়ে ওঠার কারণে ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নেমে এসেছিলো। এ আন্দোলনে নারী, শিশু ও বৃদ্ধ, ছাত্র-জনতা সহ সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষের অংশ গ্রহণ ছিলো। স্বৈরাচার ও ফ্যাসীবাদের রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে আবু সাঈদ, মীর মুগ্ধ ও জসীমেরা বুকের তাজা রক্ত রাজপথে ঢেলে দিয়েছিলেন। ফলে আমরা এক চুড়ান্ত বিজয় লাভ করে দেশ ও জাতিকে অপশাসন-দুঃশাসন মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছিলাম। তিনি জুলাই বিপ্লবে শহীদদের গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং তাদের পরিবার ও আহতদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
তিনি বলেন, বিগত প্রায় ১৬ বছরের শাসন ছিলো আওয়ামী জাহেলিয়াত। তাদের শাসনামলে রাষ্ট্রের সকল অঙ্গ প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিলো। কবর রচনা করা হয়েছিলো গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের। জনগণের সকল অধিকার কেড়ে নিয়ে দেশকে এক মাফিয়াতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছিলো। হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, অপহরণ, গুম ও গুপ্তহত্যাকে রাষ্ট্রাচারের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত করা হয়েছিলো। এমনকি বিচারের নামে প্রহসন করে জাতীয় নেতাদের হত্যা করে দেশের পবিত্র জমীনকে রক্তাক্ত ও কলঙ্কিত করা হয়েছিলো। জুলাই আন্দোলন দমাতে অগণিত মানুষকে শহীদ করা হয়েছিলো। স্বৈরাচারে প্রতিহিংসায় হাজার হাজার ছাত্র-জনতা আহত হয়েছিলেন। অনেকে হাত, পা, চোখ হারিয়ে আজ বিকলাঙ্গ। আর তাদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি নতুন এক বাংলাদেশ। তাই জাতির এসব বীর সন্তানদের যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। তিনি জুলাই বিপ্লবী জাতীয় মর্যাদায় অভিষিক্ত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান।
মহানগরী উত্তর আমীর বলেন, যাদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি তাদেরকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। আহতরা সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সরকার জুলাই বিপ্লবে আহতদের জন্য দেশে কোন বিশেষায়িত হাসপাতাল তৈরি করা হয়নি, যেখানে শুধু বিপ্লবে আহত ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। সে হাসপাতাল হওয়া উচিত দেশের সবচেয়ে সর্বাধুনিক ও সর্ববৃহৎ। যেখানে আধুনিক চিকিৎসার সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত থাকবে। তিনি এ বিষয়ে রাষ্ট্রের সক্ষমতার কথা উল্লেখ করে কলেন, এ বিষয়ে রাষ্ট্রের সক্ষমতার ঘাটতি থাকলে বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্রের সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে। মূলত, জুলাই বিপ্লবীরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাই তাদের যথাযথ মূল্যয়ন করতে হবে। যাতে আগামী প্রজন্ম দেশ ও জাতির জন্য যেকোন ত্যাগ স্বীকারে প্রেরণা পান।
শিল্পাঞ্চল ও তেজগাঁও থানারইউনিট দায়িত্বশীল সমাবেশ
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা ১২ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী জননেতা সাইফুল আলম খান মিলন বলেছেন, আগামী ১৯ জুলাই জামায়াত ঘোষিত ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সমাবেশ সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামীর এক ঐতিহাসিক অবস্থান সৃষ্টি করতে হবে। এ সমাবেশ বাস্তবায়নে ইউনিট দায়িত্বশীলদেরকে সর্বস্তরের জনগণের কাছে দাওয়াত নিয়ে পৌঁছাতে হবে। সকল শ্রেণী পেশার মানুষকে ঐতিহাসিক এই মহাসমাবেশে অংশগ্রহণ বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে।
গতকাল রাত ৯টায় শিল্পাঞ্চল ও তেজগাঁও উত্তর থানার যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত জাতীয় সমাবেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এক বিশাল ইউনিট দায়িত্বশীল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। তেজগাঁও উত্তর আমীর হাফেজ আহসান উল্লাহর সভাপতিত্বে ও শিল্পাঞ্চল থানা আমীর কলিম উল্লাহ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ইউনিট দায়িত্বশীল সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন শিল্পাঞ্চল থানা নায়েবে আমীর মোহাম্মদ উল্লাহ ভূইয়া হারুন, শিল্পাঞ্চল থানা শিবির সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মারুফ, নুরুদ্দিন জাহিদ ও নাসিফ মাহমুদ।
আখাউড়ায় দোয়া মাহফিল
কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আখাউড়া উপজেলা এক দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। উপজেলা আমীর ইকবাল হোসেন ভুইয়ার সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বি-বাড়ীয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী আতাউর রহমান সরকার, বক্তব্য রাখেন উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি বোরহান উদ্দিন খান, কর্মপরিষদ সদস্য আজিম উদ্দিন, ধরখার ইউনিয়ন সভাপতি আলাউদ্দিন, মোগড়া ইউনিয়নের সেক্রেটারি সাআদ ভুইয়া,শিবির সেক্রেটারি ওমর ফারুক।