গাজী জাহাঙ্গীর আলম জাবির, কুমিল্লা : বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার কেন্দ্রীয় সদস্য ও ঢাকা মহানগরের সাবেক সভাপতি, ইমাম ও খতিব মাওলানা মুহাম্মদ রইস উদ্দিনকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে নির্মম ভাবে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ ওঠেছে।
কুমিল্লা সহ সারাদেশে বিক্ষোভ, প্রতিবাদ, মানববন্ধন ও সমাবেশে উত্তাল। এসব সমাবেশ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের জোর দাবি জানানো হয়েছে। অন্যথায় বিভিন্ন দরবার, মাজার ও খানকা শরীফের সমন্বয়ে গঠিত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, ছাত্র ও যুব সেনা মিলে সারাদেশ ‘অচল’ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারী দেন নেতৃবৃন্দ।
নেতৃবৃন্দের দাবি— গাজীপুর থেকে অসংখ্য লোকজন নিয়ে ঢাকায় ‘ম্যাস গেদারিং ফর প্যালেস্টাইন’ কর্মসূচিতে যাওয়ায় তাঁর ওপর আক্রোশ ছিল একটি পক্ষের। সেই ‘আক্রোশ’ থেকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বিকেল ৪ টায় কুমিল্লা পৌরসভা সুপার মার্কেট থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে নগরীর প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড় পূবালী চত্বরে এসে বিক্ষোভ সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। এতে কেন্দ্রের নির্দেশে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ ও ইসলামী ছাত্রসেনা একাত্মতা প্রকাশ করে।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, কুমিল্লা জেলা সভাপতি মাওলানা মোঃ আব্দুল মান্নান, মহানগর সভাপতি মাওলানা কাজী আবু সালেহ, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মোঃ আমিনুল ইসলাম আকবরী, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী জাহাঙ্গীর আলম জাবির, অর্থ সম্পাদক তাবারক হোসাইন মিয়াজী, মহানগর সাধারণ সম্পাদক মাওলানা জসিম উদ্দিন ওয়াহেদী, মাওঃ শেখ সাদী আবদুল্লাহ সাদকপুরী,আবুল খায়ের রেজভী।
বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট কুমিল্লা জেলা সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ মাছুম বিল্লাহ মিয়াজীর সঞ্চালনায় এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা কুমিল্লা জেলা সভাপতি ছাত্রনেতা মোঃ মাইনুদ্দিন এর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, ইসলামীক ফ্রন্ট বাংলাদেশ কুমিল্লা জেলা সভাপতি মাওলানা মোঃ আবু বকর সিদ্দিক, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ছাত্রনেতা মোঃ আনোয়ার হোসেন, মাওঃ মোঃ ইয়াছিন নুরী, মাওঃ মোঃ সোলায়মান আল কাদরী, মাওঃ মোঃ শামীম রেজা, মাওঃ মোঃ বাইজিদ রাজা রাজাবী, অধ্যক্ষ মাওলানা মোঃ সফিকুল আমিন পাটোয়ারী, মাওঃ মোঃ ছাদেকুর রহমান খান মুজাদ্দেদী, সংগঠক জাবের হোসেন, ইসলামী ছাত্রসেনা কুমিল্লা জেলা সভাপতি শামীম আহমেদ, সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সৈয়দ হাসিব ও মোঃ মাইনুদ্দিন।
এসময় বক্তারা বলেন, ২৪ এর ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানে একজন ভাই বলেছিলেন, পানি লাগবে পানি। আজ এখানে দাঁড়িয়ে আমরা বলব, আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের উদ্দেশ্যে ওরে ভাই, রক্ত লাগবে রক্ত? বক্তারা বলেন, ৫২ সালে রক্ত দিয়ে ভাষাকে স্বাধীন করা হয়েছে, ৭১ সালে রক্ত দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানিদেরকে বাংলাদেশ থেকে পালাতে বাধ্য করা হয়েছে, এরপরও যদি এ স্বাধীন বাংলাদেশে কারো রক্তের প্রয়োজন হয় আজকে এ রক্ত দিয়ে কুমিল্লার পূবালী চত্বর ভাসিয়ে দিব আমরা! দিতে পারব আমরা শুধু প্রিয় নবীর মুহাব্বতে, ইনশাল্লাহ।
সরকারকে উদ্দেশ্য করে বক্তারা বলেন, আপনাদেরও কি লাশের প্রয়োজন আছে! আমরা লাশ দিতে প্রস্তুত আছি। তারপরও এ বাংলার জমিন থেকে নারায়ে তাকবীর, নারায়ে রিসালাতের স্লোগান বন্ধ করতে দেব না!
তরুন সুন্নি আলেমেদ্বীন ও সাবেক বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার নেতা মাওলানা মোঃ রইস উদ্দিনকে ‘হত্যা’ করার কারণ জানিয়ে বক্তারা বলেন, ২৬ এপ্রিল গাজীপুর থেকে অসংখ্য লোকজন নিয়ে ঢাকার সমাবেশে এসেছিলেন মাওঃ রইস উদ্দিন, এটাই তাঁর অপরাধ। তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
এ ঘটনা কারা ঘটিয়েছে তা আমাদের কাছে ‘স্পষ্ট’। যারা এ হত্যাকাণ্ড করেছে, যারা এ দেশের মধ্যে ইসলামের নাম দিয়ে বিভিন্ন মাজারে ভাঙচুর করে তাদের বলে দিতে চাই, আমরা সুন্নিরা বার বার রক্ত দিয়েছি, প্রয়োজনে সুন্নিরা রইস উদ্দিনের জন্য আবারও রক্ত দিতে রাজপথে নামবো। কিন্তু,নারায়ে রিসালাত- বিরোধী,অলি- আউলিয়া ও মাজার – দরগা বিদ্বেষী অপতৎপরতা আর মেনে নেওয়া হবে না।
নেতৃবৃন্দ, দ্রুত সময়ের মধ্যে মাওঃ রইস উদ্দিনকে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর জোর দাবি করা হয়। না হয় তরিকতপন্থী, সুন্নি জনতা রাজপথে নামতে বাধ্য হবে এবং হরতাল, অবরোধ সহ সারাদেশ অচল করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
এ সময় বক্তারা বলেন, ‘ম্যাস গেদারিং ফর ফিলিস্তিন’র শত শত গাড়ি আটকিয়েও যাদের এখনো পর্যন্ত সুন্নিদের বিরুদ্ধে আক্রোশ কমেনি, যারা রইস উদ্দিনকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে, তাদের বলতে চাই— যদি মুসলমান পরিচয়ে এজিদের মতো আচরণ কর তাহলে আমরা হুসাইনীরা তলোয়ার হাতে নিতে প্রস্তুত।
উল্লেখ্য, গত ২৬ এপ্রিল(শনিবার) ঢাকায় অনুষ্ঠিত ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে সুন্নিদের সমাবেশে মাওলানা রইস বিপুল সংখ্যক মানুষ নিয়ে যোগ দেন। এর পরদিন রবিবার সকালে গাজীপুরে ‘বলাৎকারের’ অভিযোগে রইস উদ্দিনকে প্রকাশ্যে ব্যাপক মারধর করে কিছু মানুষ। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে আদালতের মাধ্যমে গাজীপুর জেলা কারাগারে পাঠায়। রাত ৩টার দিকে কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত রইস উদ্দিন (৩৫) চাঁদপুরের মতলব উপজেলার বাদশা মিয়ার ছেলে। তিনি গাজীপুরের হায়দরাবাদ আখলাদুল জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব ছিলেন।
এদিকে, রইস উদ্দিনের বিরুদ্ধে এমন মিথ্যা অপবাদ দিয়ে প্রথমে নির্মম নির্যাতন ও পরে হত্যার প্রতিবাদে আজ ও গতকালও ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, হবিগঞ্জ, গাজীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকায়ও সোমবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় গাজীপুরে মব সৃষ্টি করে তরুণ আলেমে দ্বীন ও সংগঠক মাওলানা রইস উদ্দিনকে নির্যাতন ও বিনা চিকিৎসায় কারা হেফাজতে মৃত্যুর সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত দোষীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানান নেতৃবৃন্দ।