নিজস্ব প্রতিবেদক।
বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবির, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আয়োজনে “জুলাই গণঅভ্যুথান শীর্ষক সেমিনার : প্রতাশা ও প্রাপ্তির ১ বছর” প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত –
বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবির, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আয়োজনে “জুলাই গণ অভ্যুথান শীর্ষক সেমিনার : প্রতাশা ও প্রাপ্তির ১ বছর” প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৬ জুলাই, বুধবার বিকাল ৩ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের এক মিলনায়তন হলে অনুষ্ঠিত প্রোগ্রাম সন্ধ্যা ৭ টায় শেষ হয়। জুলাই গণ অভ্যুথানে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন মহলের স্টেকহোল্ডার, শহীদদের পরিবারের সদস্য, আহত, শিক্ষার্থীদের নিয়ে এই প্রোগ্রাম আয়োজন করা হয়।
প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি শাখার সেক্রেটারি রেজাউল করিমের সঞ্চালনায়, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির আহত গোলাম রাব্বির কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে প্রোগ্রাম শুরু হয়। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি শাখার সভাপতি জাহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভারপ্রাপ্ত ভিসি ড. আব্দুর রব।
প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়ার্ড ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ড. মির্জা গালিব। প্রবন্ধ পাঠ করেন এর নর্দান ইউনিভার্সিটির প্রভাষক, ড. একরাম উদ্দিন সুমন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, আপ বাংলাদেশ দলের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ছাত্রশিবির, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি, আব্দুর রহিম।
অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন, পুনাবের সভাপতি রায়হান পাটোয়ারী। ক্যাম্পাস মিররের সম্পাদক ,আ ফ ম মশিউর রহমান। বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিস প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহবায়ক কাজী ইমাম হোসাইন। রেভ্যুলেশন ওয়াচের প্রধান সমন্বয়কারী আশরাফুল ইসলাম নিঝুম। বাংলাদেশ জাতীয় ছাত্র সমাজ, সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি আল সায়মুন হাসানী।
আরো উপস্থিত ছিলেন, শহীদ পারভেজ শাকিলের বাবা। আহতদের মধ্যে থেকে গোলাম রাব্বি,সাঈম,তানযিল। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সমন্বয়কদের মধ্যে মুনিম,সালাহউদ্দিন শুভ,আরমান,তালহা।
প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভারপ্রাপ্ত ভিসি ড. আব্দুর রব বলেন, আমরা বিভাজন মুক্ত বাংলাদেশ চাই। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়ে সরকারকে কাজ করতে হবে। এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক সহিংসতা, অস্থিরতা বিরুদ্ধে সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নিতে হবে। গনহত্যার বিচারে সরকারকে মনোযোগী হতে হবে।
প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন, হাওয়ার্ড ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ড. মির্জা গালিব তিনি বলেন, যে রাজনীতিতে বিচার বিভাগ,সংবিধান কে গুরুত্ব না দেন তাহলে আবার সেই ফ্যাসিস্ট ফিরে আসবে। এমন স্বৈরতন্ত্রের জন্য তো কেউ শহীদ এবং আহত হয় নাই। যুবকদের ভাবনা কি তা রাজনীতিক ব্যক্তিদের ভাবতে হবে। নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষ এর মধ্যে ঐক্যমত হতে হবে। ইকোনমিক রিফোর্মেশন করতে হবে, যাতে ফেল করা ছাত্রও ছোট ব্যবসা করতে পারে। প্রবন্ধ পাঠ করেন নর্দান ইউনিভার্সিটির প্রভাষক, ড. একরাম উদ্দিন সুমন। এবং জুলাই অভ্যুথানের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ১ বছর নিয়ে আলোচনা রাখেন।
প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির শহীদ শাকিলের সম্মানিত বাবা কান্না বিজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার ছেলেকে হারানোর পরে আমার জীবনটা হাহাকার হয়ে গিয়েছে। শাকিলের জীবনটা অন্য ছেলেদের থেকে আলাদা ছিল। সংগ্রাম, মিছিল, আন্দোলন, জুলুমের বিরুদ্ধে ছিলেন। ১৮ জুলাই বিএন এসের সামনে থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়। মামলা করার পরেও এখনো কোনো বিচার পাই নি।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, আপ বাংলাদেশ দলের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত বলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়তে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসতে হবে। PUNAB এর প্রেসিডেন্ট রায়হান পাটোয়ারী বলেন, জুলাই গনঅভ্যুত্থানে মূল এজেন্ডা বৈষম্য বিরোধী বাংলাদেশ গড়া। তার অংশ হিসাবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর ভ্যাট আরোপ প্রত্যাহার করতে হবে এবং গবেষণায় সরকারি সহযোগীতা দিতে হবে। এছাড়াও ক্রেডিটের রাজনীতি ভূলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাংলাদেশ বিনির্মান করতে হবে।
বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিস প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহবায়ক কাজী ইমাম হোসাইন বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান ১ বছর হয়ে যাওয়ার পরে-ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কে একপ্রকার দূরে সরিয়ে দিয়েছে একটি পক্ষ যাঁর ফলে জুলাই আন্দোলনের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামি সংগঠন গুলোর নেতৃত্বের অবদান তা প্রকাশ পাইনি।
প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির আহতদের মধ্যে থেকে গোলাম রাব্বি, সাঈম, তানযিল তারা বলেন, প্রতিদিন আন্দোলনে যাওয়ার আগে নামাজ পড়ে বের হতাম। আবার ঘরে ফিরব কিনা জানতাম না। শহীদ হওয়ার ইচ্ছা নিয়েই আন্দোলনে গিয়েছি।
জুলাই আন্দোলনে গড়ে ওঠা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, সম্মিলিত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সমন্বয়করা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, তাদের মধ্যে অন্যতম মুনিম, আরমান, শুভ, তালহা। তারা বলেন, এই আন্দোলনের শুরু থেকেই শিবির আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখে। তারা আন্দোলন সামনে এগিয়ে নেওয়ার জন্য নিয়মিত মিটিং করতো, লজিস্টিক সাপোর্ট দিতো।
অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য দেন, বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবির,প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, জুলাই হত্যাকাণ্ডসহ সকল গুম-খুনের বিচার নিশ্চিত করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
রাষ্ট্রব্যবস্থায় আমূল সংস্কার এনে জনগণের অধিকার ও স্বাধীনতা সুরক্ষা করতে হবে। স্বৈরাচারবিরোধী শাসন, স্বচ্ছ নির্বাচন, জবাবদিহিমূলক সরকার ও ইসলামী মূল্যবোধভিত্তিক সমাজ গঠন করতে হবে। এবং জুলাই সনদ নিশ্চিত করতে হবে,প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ওপর আরোপিত ভ্যাট প্রত্যাহার করতে হবে। জুলাই গণঅভ্যুথানে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের যে অবদান তা জাতির কাছে তুলে ধরতে হবে। শিক্ষা, অর্থনীতি ও মিডিয়ায় ইনক্লুসিভ উন্নয়নের মাধ্যমে একটি মানবিক বাংলাদেশ নির্মাণ করতে হবে।
শহীদদের পরিবারের সদস্য, আহত এবং সমাজের গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ,সমন্বয়ক,বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে প্রাণবন্ত আয়োজনে সুশৃঙ্খল ভাবে প্রোগ্রামের সমাপ্ত হয়।