বানারীপাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি : দীর্ঘ ১৫ থেকে ১৭ বছর ধরে এক টুকরো মাথাগোঁজার ঠাঁইকে আপন ভেবে গড়ে তুলেছিলেন তারা সংসার, স্মৃতি আর স্বপ্ন। অথচ আজ সেই আশ্রয়কেই ‘অবৈধ দখল’ আখ্যা দিয়ে তালাবদ্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। এমন চিত্র বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার খেজুরবাড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩১টি ভূমিহীন পরিবারের।
২০২৩ সালের ২২ মার্চ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’-এর আওতায় বানারীপাড়াকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত’ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু সেই ঘোষণার পর মাত্র এক বছর পার হতেই উল্টো দৃশ্য সামনে আসে। ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় পূর্ব কোনও নোটিশ বা সতর্কীকরণ ছাড়াই উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোতে তালা লাগিয়ে দেয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বাইজিদুর রহমান।
ইউএনও জানান, “এই ঘরগুলোতে যারা বসবাস করছিলেন, তাদের কারোরই বৈধ মালিকানা নেই। তারা দীর্ঘদিন ধরে সরকারি জমি-ঘর দখল করে রেখেছেন। আগেও তাদের চলে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, মানেননি। তাই বাধ্য হয়েই আমরা ঘর তালাবদ্ধ করেছি।”
কিন্তু বাস্তবতা বলছে অন্য কথা। উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলোর দাবি, তারা আশ্রয়ণের ঘরগুলোতে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতিতে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছেন। তৎকালীন ইউএনও ও ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরযুক্ত ‘স্থায়ী বসবাসের অনুমতিপত্র’ রয়েছে তাদের কাছে। সেই কাগজেই তারা ভরসা রেখে দীর্ঘ সময় ধরে এখানে জীবন গড়েছেন।
ঘরের তালা পড়ার পর পরিবারগুলো ঘর ছাড়েনি, কারণ যাওয়ার জায়গা নেই। ঘরের সামনেই পলি-খড় দিয়ে বেড়া ঘেরা করে অস্থায়ী ঘর তুলে এখন তারা খোলা আকাশের নিচে দিন পার করছেন। কয়েক মাসের শিশুর কান্না, স্কুলগামী সন্তানের বই-খাতা ভিজে যাওয়ার অভিজ্ঞতা, এসব এখন তাদের নিত্যদিনের চিত্র। এতদিন পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুনর্বাসনের কথা বলা হলেও এখনও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ইউএনও বলেছিলেন, যাদের আর কোথাও ঘর বা জমি নেই, তারা পুনর্বাসনের আওতায় আসবে। কিন্তু ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও কেউ খোঁজ নিতে আসেনি।
স্থানীয় এক প্রবীণ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দেশে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’ এটা ছিল একটা মানবিক ঘোষণা। কিন্তু বাস্তবে গরিবের ঘরে তালা লাগানো হয়। এটা নীতির পরাজয়।”