ঢাকা , বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
মানব পাচার মামলার আসামী শওকত যশোরের বাঘারপাড়ায় র‌্যাব কর্তৃক গ্রেফতার। ময়মনসিংহ নগরীর রহমতপুরে শব্দদুষণ করায় ৩ টি গাড়িত ৪০০০ টাকা জরিমানা বাকেরগঞ্জে গৃহবধূকে গলা কেটে হত্যা  সাপাহারে সীমান্তে টিকটক করতে গিয়ে দুজন ছাত্র আটক। উল্লাপাড়ায় জামায়াতের কর্মীসভায় নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতা তানোর গোল্লাপাড়া বাজারে অভিনব কায়দায় এক রাতে ৫ দোকানে চুরি মাসুদ খানকে ভরপাশার ৫নং ওয়ার্ডে সভাপতি পদে দেখতে চায় বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা”নব্য বিএনপির মাথা নস্ট! পিরোজপুরের না‌জিরপু‌রে জমি দখল করে চলছে অবৈধ গ্যাস কারখানা পিরোজপুরের নাজিরপুরে ইয়াবাসহ দুই মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার বদরগঞ্জে বিএনপি নেতা লাভলু মিয়া হত্যার জড়িত প্রমান করাতে পারলে এক লক্ষ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করলেন সরোয়ার জাহান মানিক। 

বানারীপাড়ায় মাদক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন অর্ধযুগেও অধরা !

বানারীপাড়ায় মাদক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন অর্ধযুগেও অধরা !

 

বিশেষ প্রতিনিধি॥ রাজধানীর যাত্রাবাড়ি থানার একটি মাদক মামলায় ৫ বছরের সাজাপ্রাপ্ত ও গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামী বানারীপাড়া উপজেলার ইলুহার ইউনিয়ন বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিনকে গত ৬ বছরেও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।  মাদক মামলায় সাজা হওয়ার অর্ধযুগ পেরিয়ে গেলেও ধরাছোঁয়ার বাহিরে থেকে তিনি মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, শালিস বানিজ্য ও প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলাসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বীরদর্পে চালিয়ে যাচ্ছেন।

 

গতবছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরে তিনি এলাকায় স্থায়ীভাবে ফিরে নিজস্ব বাহিনী গঠন করে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। ইলুহার ইউনিয়ন বিএনপির শীর্ষ এক নেতার ডানহস্ত হিসেবে পরিচিত একই কমিটির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন ও তার বাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতনে ইলুহার ইউনিয়নের দলমত নির্বিশেষে সকল মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। গোটা এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রাখা এ বাহিনীর ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে প্রতিবাদ কিংবা টুশব্দটিও করতে পারছেন না। সম্প্রতি নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে ইলুহার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামকে স্থানীয় জনতাবাজারে প্রকাশ্য দিবালোকে নির্মমভাবে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। এসময় মেরে ফেলা ও থানা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদাও নেওয়া হয়।

 

একই দিন স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী সাইফুল ইসলামকেও মারধর করা হয়। আহত আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম বর্তমানে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধিন। তিনি পঙ্গু হওয়ার পথে। চলতি সপ্তাহে তার ডান পায়ের ছিড়ে যাওয়া হাটুর লিগামেন্টের অস্ত্রোপচার করা হয়।

 

এছাড়া গতবছরের ডিসেম্বরে ইলুহার ইউনিয়নের মলুহার গ্রামের পবনেরহাট বাজারে কুড়িগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজের সহকারি অধ্যাপক মোঃ জাহিদুল ইসলাম সোহেলদের ক্রয়কৃত সম্পত্তির দোকানঘর  ভেঙ্গে ও লুট করে জবরদখল চেষ্টার ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শাকিল আহম্মেদসহ আসামীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা তুলে নেওয়ার জন্য নাসির উদ্দিন ওই সহকারি অধ্যাপককে নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেন। ফলে তিনি বাদী হয়ে নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে বানারীপাড়া থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন।

 

এদিকে মাদক মামলা সুত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের ৮ ডিসেম্বর নাসির উদ্দিন ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে র‌্যাবের হাতে ৮শ’ পিস ইয়াবা ও দুটি মুঠোফোন সহ গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘদিন কারাবাস করেন। র‌্যাব-১০’র কর্পোরাল কেনেডী বড়ুয়া বাদী হয়ে নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে রাজধানীর যাত্রাবাড়ি থানায় মাদক দ্রব্য আইনে তখন মামলা দায়ের করেন। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ২০১৯ সালের  ২৪ জানুয়ারী ওই মামলার রায়ে তার ৫ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও তিন মাসের জেলের সাজা দেওয়া হয়।

 

রায় ঘোষণার সময় জামিনে বের হয়ে পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে একই সঙ্গে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করা হয়। ধূূর্ত নাসির উদ্দিনকে গত  অর্ধ যুগ পেরিয়ে গেলেও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। মাদক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামী নাসির উদ্দিন তিনি নন এ মর্মে ভুল বুঝিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের প্রত্যয়ন নিয়ে ধুরন্ধর নাসির উদ্দিন পুলিশ ও আদালতকে বিভ্রান্ত করে এতদিন গ্রেফতার এড়িয়ে নিজেকে রক্ষা করেন। রাষ্ট্রপক্ষের এপিপি বিষয়টি আদালতের নজরে আনলে গত ১২ মে একই আদালত তার বিরুদ্ধে পুনরায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

 

এ খবরে গাডাকা দেন নাসির উদ্দিন। তার বিরুদ্ধে নতুন করে আবারও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির খবরে তিনি পুরনো কৌশলে মাদক মামলায়, সাজাপ্রাপ্ত আসামী নাসির উদ্দিন তিনি নন এ মর্মে সংশ্লিষ্ট আদালতকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন বলে বিশ্বস্ত সুত্রে জানা গেছে। মুঠোফোন বন্ধ থাকায় এসব অভিযোগের ব্যপারে নাসির উদ্দিনের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

 

এ প্রসঙ্গে বানারীপাড়া থানার ওসি মো. মোস্তফা বলেন, আদালতের সাজা ও গ্রেফতারী পরোয়ানার কপি প্রাপ্তি সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

প্রসঙ্গত, নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে প্রায় দেড়দশক  ধরে কক্সবাজারের টেকনাফসহ বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারত ও মিয়ানমার থেকে  ইয়াবা ও ফেন্সিডিলের বিশাল চালান এনে বিস্তৃত সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বানারীপাড়াসহ সারা দেশে সরবরাহ করে যুবসমাজকে ধংশের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এদিকে এলাকাবাসী নাসির উদ্দিন ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।

 

 

আপলোডকারীর তথ্য

news room

জনপ্রিয় সংবাদ

মানব পাচার মামলার আসামী শওকত যশোরের বাঘারপাড়ায় র‌্যাব কর্তৃক গ্রেফতার।

বানারীপাড়ায় মাদক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন অর্ধযুগেও অধরা !

আপডেট সময় ০৬:৩৯:৩৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫

 

বিশেষ প্রতিনিধি॥ রাজধানীর যাত্রাবাড়ি থানার একটি মাদক মামলায় ৫ বছরের সাজাপ্রাপ্ত ও গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামী বানারীপাড়া উপজেলার ইলুহার ইউনিয়ন বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিনকে গত ৬ বছরেও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।  মাদক মামলায় সাজা হওয়ার অর্ধযুগ পেরিয়ে গেলেও ধরাছোঁয়ার বাহিরে থেকে তিনি মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, শালিস বানিজ্য ও প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলাসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বীরদর্পে চালিয়ে যাচ্ছেন।

 

গতবছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরে তিনি এলাকায় স্থায়ীভাবে ফিরে নিজস্ব বাহিনী গঠন করে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। ইলুহার ইউনিয়ন বিএনপির শীর্ষ এক নেতার ডানহস্ত হিসেবে পরিচিত একই কমিটির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন ও তার বাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতনে ইলুহার ইউনিয়নের দলমত নির্বিশেষে সকল মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। গোটা এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রাখা এ বাহিনীর ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে প্রতিবাদ কিংবা টুশব্দটিও করতে পারছেন না। সম্প্রতি নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে ইলুহার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামকে স্থানীয় জনতাবাজারে প্রকাশ্য দিবালোকে নির্মমভাবে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। এসময় মেরে ফেলা ও থানা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদাও নেওয়া হয়।

 

একই দিন স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী সাইফুল ইসলামকেও মারধর করা হয়। আহত আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম বর্তমানে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধিন। তিনি পঙ্গু হওয়ার পথে। চলতি সপ্তাহে তার ডান পায়ের ছিড়ে যাওয়া হাটুর লিগামেন্টের অস্ত্রোপচার করা হয়।

 

এছাড়া গতবছরের ডিসেম্বরে ইলুহার ইউনিয়নের মলুহার গ্রামের পবনেরহাট বাজারে কুড়িগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজের সহকারি অধ্যাপক মোঃ জাহিদুল ইসলাম সোহেলদের ক্রয়কৃত সম্পত্তির দোকানঘর  ভেঙ্গে ও লুট করে জবরদখল চেষ্টার ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শাকিল আহম্মেদসহ আসামীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা তুলে নেওয়ার জন্য নাসির উদ্দিন ওই সহকারি অধ্যাপককে নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেন। ফলে তিনি বাদী হয়ে নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে বানারীপাড়া থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন।

 

এদিকে মাদক মামলা সুত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের ৮ ডিসেম্বর নাসির উদ্দিন ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে র‌্যাবের হাতে ৮শ’ পিস ইয়াবা ও দুটি মুঠোফোন সহ গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘদিন কারাবাস করেন। র‌্যাব-১০’র কর্পোরাল কেনেডী বড়ুয়া বাদী হয়ে নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে রাজধানীর যাত্রাবাড়ি থানায় মাদক দ্রব্য আইনে তখন মামলা দায়ের করেন। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ২০১৯ সালের  ২৪ জানুয়ারী ওই মামলার রায়ে তার ৫ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও তিন মাসের জেলের সাজা দেওয়া হয়।

 

রায় ঘোষণার সময় জামিনে বের হয়ে পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে একই সঙ্গে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করা হয়। ধূূর্ত নাসির উদ্দিনকে গত  অর্ধ যুগ পেরিয়ে গেলেও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। মাদক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামী নাসির উদ্দিন তিনি নন এ মর্মে ভুল বুঝিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের প্রত্যয়ন নিয়ে ধুরন্ধর নাসির উদ্দিন পুলিশ ও আদালতকে বিভ্রান্ত করে এতদিন গ্রেফতার এড়িয়ে নিজেকে রক্ষা করেন। রাষ্ট্রপক্ষের এপিপি বিষয়টি আদালতের নজরে আনলে গত ১২ মে একই আদালত তার বিরুদ্ধে পুনরায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

 

এ খবরে গাডাকা দেন নাসির উদ্দিন। তার বিরুদ্ধে নতুন করে আবারও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির খবরে তিনি পুরনো কৌশলে মাদক মামলায়, সাজাপ্রাপ্ত আসামী নাসির উদ্দিন তিনি নন এ মর্মে সংশ্লিষ্ট আদালতকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন বলে বিশ্বস্ত সুত্রে জানা গেছে। মুঠোফোন বন্ধ থাকায় এসব অভিযোগের ব্যপারে নাসির উদ্দিনের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

 

এ প্রসঙ্গে বানারীপাড়া থানার ওসি মো. মোস্তফা বলেন, আদালতের সাজা ও গ্রেফতারী পরোয়ানার কপি প্রাপ্তি সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

প্রসঙ্গত, নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে প্রায় দেড়দশক  ধরে কক্সবাজারের টেকনাফসহ বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারত ও মিয়ানমার থেকে  ইয়াবা ও ফেন্সিডিলের বিশাল চালান এনে বিস্তৃত সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বানারীপাড়াসহ সারা দেশে সরবরাহ করে যুবসমাজকে ধংশের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এদিকে এলাকাবাসী নাসির উদ্দিন ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।