ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
হত্যাচেষ্টা মামলায়; র‌্যাব-১১ এর অভিযানে ০১ জন আসামি গ্রেফতার। ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত লৌহ কারখানাগুলো নান্দাইলে জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ উদ্বোধন করেন-ইউএনও সারমিনা সাত্তার ঈশ্বরগঞ্জে-সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত-৩ আহত-৬ পবিত্র ঈদ উল আযহা-২০২৫ উপলক্ষে যানজট নিরসন ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্তে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত পুঠিয়ায় বিপুল পরিমান ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট-সহ মাদক কারবারী রনি গ্রেফতার  তানোরে মন্দিরের সম্পত্তি জবর দখলের চেষ্টা ময়মনসিংহ বিভাগের বোরো মৌসুমে ধান চাল সংগ্রহ সন্তোষজনক – খাদ্য উপদেষ্টা  আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক শিক্ষার্থীরা এমফিল পিএইচডির সুযোগ পাচ্ছে ইআবিতে। ঘোনায় কালীমন্দিরে অগ্নিকান্ডর ঘটনা ঘটে 

আওয়ামী লীগের সেই প্রভাবশালী চেয়ারম্যান সোহেল এখনো ‘বীরদর্পে’

আওয়ামী লীগের সেই প্রভাবশালী চেয়ারম্যান সোহেল এখনো ‘বীরদর্পে’

রাজশাহী প্রতিনিধি : রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মাটিকাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোহেল রানা। ছিলেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের অপসারিত মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী-৩ আসনের সাবেক এমপি আসাদুজ্জামান আসাদের ঘনিষ্ট।আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে থাকতেন সামনের সারিতে।
পুলিশের তালিকাভুক্ত এই মাদক ব্যবসায়ী ৫ আগস্টের পর কিছুদিন ছিলেন, আত্মগোপনে।এরপর আবার প্রকাশ্যে চালিয়ে যাচ্ছেন কর্মকান্ড।এলাকার সব আওয়ামী লীগ নেতা যখন আত্মগোপনে, তখন সুবিধাভোগী সোহেল রানা এখনো ‘বীরদর্পে’।
সোহেল রানা অবশ্য দাবি করেছেন, আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থাকলেও তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। তাই চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। তবে দু’তিনদিন থেকে পরিষদে যাওয়া বন্ধ রেখেছেন।

গোদাগাড়ীর তালিকাভুক্ত শীর্ষ হেরোইন ব্যবসায়ী ও নাশকতা মামলার আসামি সোহেল রানা ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ও ক্রসফায়ারের আতঙ্কে আত্মগোপনে ছিলেন। সেখান থেকে ফিরে ২০২১ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তার আছে বিপুল অবৈধ সম্পদ, যা এসেছে মূলত হেরোইন ব্যবসা করে গত এক যুগে। তার টাকার কাছে বিক্রি হয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাই তাকে ইউপি চেয়ারম্যান বানিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয়রা জানান, ৩৪ বছর বয়সী সোহেলের বাবা মজিবুর রহমান বাসের চালক ছিলেন। ১৫ বছর আগে সোহেল বাসের হেলপারি করতেন। মাত্র দেড় দশকের ব্যবধানে তিনি এখন কোটি টাকার মালিক। তিনি পুলিশের হাতে হেরোইন সহ গ্রেপ্তার হয়েছেন। কয়েক বছর আগে তার মামা মহিশালবাড়ীর গোলাম রাব্বানীকে এক কেজি হেরোইনসহ গ্রেপ্তার করে বিজিবি।এছাড়া তার শ্যালক সবুজ এক কেজি হেরোইনসহ গ্রেপ্তার হয়। এসব হেরোইনের মালিক ছিলেন সোহেল।
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার টাকায় মাটিকাটায় আয়োজন করা হয় ইসলামী জলসার। সে জলসায় প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন প্রধান বক্তা। এ ঘটনায় সোহেলকেও আসামি করে নাশকতার মামলা করে পুলিশ। এ মামলায় ৩৪ দিন হাজতবাস করেন তিনি। এর পর তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নাম লেখান।
স্থানীয় এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদের সঙ্গেও তার সুসম্পর্ক আছে বলে জানান স্থানীয়রা।
৫ আগস্টের পর তিনি স্থানীয় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের ম্যানেজ করে পরিষদে ছিলেন, সক্রিয়। এখনো হাজিরা খাতায় করছেন স্বাক্ষর।
স্থানীয় শহিদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ‘হেরোইন ব্যবসায়ী সোহেল রানার প্রচুর টাকা। তিনি টাকা দিয়ে দলীয় নেতাদের কিনে ফেলেন। গত ইউপি নির্বাচনে প্রায় দুই কোটি টাকা খরচ করেছেন বলে শুনেছি।’
গোদাগাড়ী থানা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে হেরোইনসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন সোহেল। এ ঘটনায় নাটোর সদর থানার মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া ২০১৭ সালে পুলিশ বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগে মামলা করেছিল। সে মামলায় তিনি জেলে ছিলেন। ২০১৩ সালে তার নামে মারামারির একটি মামলা হয়েছিল।
স্থানীয়রা জানান, কয়েক বছর আগে গাইবান্ধায় হেরোইনসহ একবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন সোহেল রানা।পরে সে মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন।
সোহেল রানা বলেন, তিনি জীবনে কখনোই মাদকসহ গ্রেপ্তার হননি।নাটোরে যে মামলা হয়েছিল, সে ঘটনায় তিনি আসামি ছিলেন না।পুলিশ ভুল করে তাকে আসামি করে।গাইবান্ধায় কখনোই গ্রেপ্তার হননি।তবে ২০১৭ সালে নাশকতা মামলায় জেলে থাকার কথা স্বীকার করেন তিনি।

ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল রাজশাহীর নিউমার্কেটে বিগবাজার ও শ্রাবণ ফ্যাশান নামে দুটি দোকানের মালিক। এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর মালিকানাধীন বিলাসবহুল প্লাজায় ফ্ল্যাট কিনে সপরিবারে বাস করেন তিনি। এর দ্বিতীয় তলায় কাপড় ও কসমেটিকের দোকান এবং ফুড কর্নারেও একটি দোকান আছে তার। তার ট্রাক আছে চারটি, প্রাইভেটকার একটি। গোদাগাড়ীতে জমি কিনেছেন অন্তত ২০ বিঘা। এছাড়া নগরীতে একটি পুকুর ভরাট করে নির্মাণ করেছেন মার্কেট।
এসব সম্পদের বিষয়ে সোহেল বলেন, ‘আমার যত সম্পদ আছে, তার সব খবর আয়কর বিভাগের জানা।আমি আয়কর দিই।’
আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন, এমন নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা সবাই যখন আত্মগোপনে, তখন সোহেল রানা বীরদর্পে অফিস করছেন।চালিয়ে যাচ্ছেন কর্মকান্ড।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ম্যানেজ করেই তিনি এলাকায় অবস্থান করছেন।
গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন জানান, সোহেল রানার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই।ফলে তাকে গ্রেফতার করা হয়নি।

আপলোডকারীর তথ্য

news room

জনপ্রিয় সংবাদ

হত্যাচেষ্টা মামলায়; র‌্যাব-১১ এর অভিযানে ০১ জন আসামি গ্রেফতার।

আওয়ামী লীগের সেই প্রভাবশালী চেয়ারম্যান সোহেল এখনো ‘বীরদর্পে’

আপডেট সময় ০২:০১:২৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫
রাজশাহী প্রতিনিধি : রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মাটিকাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোহেল রানা। ছিলেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের অপসারিত মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী-৩ আসনের সাবেক এমপি আসাদুজ্জামান আসাদের ঘনিষ্ট।আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে থাকতেন সামনের সারিতে।
পুলিশের তালিকাভুক্ত এই মাদক ব্যবসায়ী ৫ আগস্টের পর কিছুদিন ছিলেন, আত্মগোপনে।এরপর আবার প্রকাশ্যে চালিয়ে যাচ্ছেন কর্মকান্ড।এলাকার সব আওয়ামী লীগ নেতা যখন আত্মগোপনে, তখন সুবিধাভোগী সোহেল রানা এখনো ‘বীরদর্পে’।
সোহেল রানা অবশ্য দাবি করেছেন, আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থাকলেও তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। তাই চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। তবে দু’তিনদিন থেকে পরিষদে যাওয়া বন্ধ রেখেছেন।

গোদাগাড়ীর তালিকাভুক্ত শীর্ষ হেরোইন ব্যবসায়ী ও নাশকতা মামলার আসামি সোহেল রানা ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ও ক্রসফায়ারের আতঙ্কে আত্মগোপনে ছিলেন। সেখান থেকে ফিরে ২০২১ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তার আছে বিপুল অবৈধ সম্পদ, যা এসেছে মূলত হেরোইন ব্যবসা করে গত এক যুগে। তার টাকার কাছে বিক্রি হয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাই তাকে ইউপি চেয়ারম্যান বানিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয়রা জানান, ৩৪ বছর বয়সী সোহেলের বাবা মজিবুর রহমান বাসের চালক ছিলেন। ১৫ বছর আগে সোহেল বাসের হেলপারি করতেন। মাত্র দেড় দশকের ব্যবধানে তিনি এখন কোটি টাকার মালিক। তিনি পুলিশের হাতে হেরোইন সহ গ্রেপ্তার হয়েছেন। কয়েক বছর আগে তার মামা মহিশালবাড়ীর গোলাম রাব্বানীকে এক কেজি হেরোইনসহ গ্রেপ্তার করে বিজিবি।এছাড়া তার শ্যালক সবুজ এক কেজি হেরোইনসহ গ্রেপ্তার হয়। এসব হেরোইনের মালিক ছিলেন সোহেল।
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার টাকায় মাটিকাটায় আয়োজন করা হয় ইসলামী জলসার। সে জলসায় প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন প্রধান বক্তা। এ ঘটনায় সোহেলকেও আসামি করে নাশকতার মামলা করে পুলিশ। এ মামলায় ৩৪ দিন হাজতবাস করেন তিনি। এর পর তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নাম লেখান।
স্থানীয় এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদের সঙ্গেও তার সুসম্পর্ক আছে বলে জানান স্থানীয়রা।
৫ আগস্টের পর তিনি স্থানীয় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের ম্যানেজ করে পরিষদে ছিলেন, সক্রিয়। এখনো হাজিরা খাতায় করছেন স্বাক্ষর।
স্থানীয় শহিদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ‘হেরোইন ব্যবসায়ী সোহেল রানার প্রচুর টাকা। তিনি টাকা দিয়ে দলীয় নেতাদের কিনে ফেলেন। গত ইউপি নির্বাচনে প্রায় দুই কোটি টাকা খরচ করেছেন বলে শুনেছি।’
গোদাগাড়ী থানা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে হেরোইনসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন সোহেল। এ ঘটনায় নাটোর সদর থানার মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া ২০১৭ সালে পুলিশ বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগে মামলা করেছিল। সে মামলায় তিনি জেলে ছিলেন। ২০১৩ সালে তার নামে মারামারির একটি মামলা হয়েছিল।
স্থানীয়রা জানান, কয়েক বছর আগে গাইবান্ধায় হেরোইনসহ একবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন সোহেল রানা।পরে সে মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন।
সোহেল রানা বলেন, তিনি জীবনে কখনোই মাদকসহ গ্রেপ্তার হননি।নাটোরে যে মামলা হয়েছিল, সে ঘটনায় তিনি আসামি ছিলেন না।পুলিশ ভুল করে তাকে আসামি করে।গাইবান্ধায় কখনোই গ্রেপ্তার হননি।তবে ২০১৭ সালে নাশকতা মামলায় জেলে থাকার কথা স্বীকার করেন তিনি।

ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল রাজশাহীর নিউমার্কেটে বিগবাজার ও শ্রাবণ ফ্যাশান নামে দুটি দোকানের মালিক। এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর মালিকানাধীন বিলাসবহুল প্লাজায় ফ্ল্যাট কিনে সপরিবারে বাস করেন তিনি। এর দ্বিতীয় তলায় কাপড় ও কসমেটিকের দোকান এবং ফুড কর্নারেও একটি দোকান আছে তার। তার ট্রাক আছে চারটি, প্রাইভেটকার একটি। গোদাগাড়ীতে জমি কিনেছেন অন্তত ২০ বিঘা। এছাড়া নগরীতে একটি পুকুর ভরাট করে নির্মাণ করেছেন মার্কেট।
এসব সম্পদের বিষয়ে সোহেল বলেন, ‘আমার যত সম্পদ আছে, তার সব খবর আয়কর বিভাগের জানা।আমি আয়কর দিই।’
আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন, এমন নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা সবাই যখন আত্মগোপনে, তখন সোহেল রানা বীরদর্পে অফিস করছেন।চালিয়ে যাচ্ছেন কর্মকান্ড।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ম্যানেজ করেই তিনি এলাকায় অবস্থান করছেন।
গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন জানান, সোহেল রানার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই।ফলে তাকে গ্রেফতার করা হয়নি।