জামালপুর প্রতিনিধি। জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলার আরামনগর বাজার রুপালী ব্যাংকের ২ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে ভুয়া হাজিরা ও জাল স্বাক্ষরের মাধ্যমে বেতনরে টাকা আতুসাৎ করার অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি ব্যাংকের উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের কাছে ঘটনার তদন্ত্র করে দোষী সাব্যস্তদের উপযুক্ত শাস্তি প্রদানের জন্য লিখিত আবেদন করেন। আর ঘটনাটি প্রকাশ হয়ে গেলে তড়িগড়ি করে আতুসাৎকৃত অর্থ ব্যাংক হিসাবে জমা করে দেন তারা।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, রিয়া খাতুন নামে এক মহিলা ‘ঐ শাখায় নো ওয়ার্ক নো পে’ হিসেবে কাজ করেন। তিনি ২০২৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর জামালপুর শহরের পিউর ল্যাব এন্ড হাসপাতালে সন্তান প্রসব করেন । সন্তান প্রসবের দিন হইতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত একদিনও অফিস করেননি।
অথচ কাজ না করলেও তার ৫৯২৬০১০০০৬২৭০ নং ব্যাংক হিসাবে প্রতি কর্মদিবসের টাকা জমা হয়েছে। যেমন ডিসেম্বর/২০২৪ মাসের ১১ হাজার টাকা, জানুয়ারী/২০২৫ মাসের ১১ হাজার টাকা ও ফেব্রুয়ারী /২০২৫ মাসের ১০ হাজার টাকাসহ মোট ৩২ হাজার টাকা। যা শাখা ব্যবস্থাপক তারেক হাসান ও মহিলা কর্মচারী রিয়া খাতুন মিলে ভাগাভাগি করে নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
রিয়া খাতুন ২০২৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর সন্তান প্রসব করলেও তার ব্যাংক হিসাবে ঐ ডিসেম্বর মাসের প্রত্যেক কর্মদিবসের বেতন যোগ করা হয়েছে, আতুসাৎ করার উদ্দেশ্যে। এ ব্যাপারে রিয়া খাতুনকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি কিছু বলতে পারবেননা বলে এড়িয়ে যান।
উক্ত শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার কামরুন্নাহার বলেন, রিয়া খাতুনের আবেদনের প্রেক্ষিতে মানবিক কারনে তাকে ২ মাসের অগ্রীম বেতন দেওয়া হয়েছে ধার হিসেবে যা পরবর্তীতে তার বেতন থেকে সমন্বয় করার শর্তসাপেক্ষে। এ ব্যাপারে আমরা শাখা ব্যবস্থাপকের সাথে আমরা একটি সমন্বয় মিটিং কওে সিদ্ধানত নিয়েছিলাম। কিন্তু তার কাছে রিয়া খাতুনের আবেদনের কপি এবং শাখা ব্যবস্থাপকের সাথে সমন্বয় মিটিঙয়ের ডকুমেন্ট চাইলে নানা অজুহাতে তিনি তা দেখাতে ব্যর্থ হন।
আরামনগর শাখার বর্তমান শাখা ব্যবস্থাপক মোঃ ফিরোজ রশিদের কাছে অভিযোগের ব্যপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারেক হাসানের বদলির পর এই শাখায় আমি নতুন যোগদান করেছি তাই আমি এ ব্যপারে কোন সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারবনা। আর আগের ব্যবস্তাপক যেহেতু আমাকে কোন ডকুমেন্টস বুঝিয়ে দিযে যায়নি তাই আমি অ দিতে পারছিনা ।
তিনি আরও বলেন, এটা সামান্য একটা ব্যপার আর তারা ভুল যদি বওে থাকে তাহলে ক্ষমাসুন্দও দূষ্টিতে দেখে কোন প্রতিবেদন না লেখার অনুরোধ করেন তিনি ।
অভিযোগে আরও জানা যায়, রিয়া খাতুন ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের ১৭ তারিখ পর্যন্ত কাজ করেছেন অথচ তার ব্যাংক ব্যালেন্স হিসাবে পুরো মাসেরই বেতন জমা হয়েছে। উক্ত শাখ্য় ‘নো ওয়ার্ক নো পে’ হিসাবে রিয়া খাতুন হাজিরা খাতায় হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেননি। শাখা ব্যবস্থাপক নিজেই রিয়া খাতুনের হাজিরা খাতায় নকল স্বাক্ষর করেন বলে অভিযোঘ পাওয়া যায়। তবে রিয়া খাতুনের যে টাকা শাখা ব্যবস্থাপক আত্মসাৎ করেছিলেন তা প্রকাশ পাওয়ায় ১৮মার্চ/২০২৫ তারিখে ২১ হাজার টাকা ব্যাংক ব্যালেন্স হিসাবে জমা করেন ওই দুই কর্মকর্তা ও কর্মচারী।
তবে ২১ হাজার টাকা ফেরত দিলেও এখনও বাকী ৪ হাজার টাকা ফেরত প্রদান করা হয়নি। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত শাখা ব্যবস্থাপক তারেক রহমানকে বদলি করলেও তাকে রিলিজ করা হয় দীর্ঘদিন পর।
অনিয়ম প্রসঙ্গে অভিযুক্ত আরামনগর শাখার পূর্বেও ব্যবস্থাপক এবং বর্তমানে রুপালী ব্যাংক জোনাল অফিসে কর্মরত মোঃ তারেক হাসান অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, রিয়া খাতুন ১৮ ডিসেম্বর/২০২৫ হতে ফেব্রুয়ারী/২০২৫ পর্যন্ত মাতৃত্বের ছুটিতে ছিলেন।
তিনি তার শাখায় ”নো ওয়ার্র্ক নো পে” হিসাবে কর্মরত ছিলেন। মানবিক কারনে তার আবেদনের প্রেক্ষিতে ছুটিতে থাকার পরও তাকে বেতন প্রদান করা হয়েছিল কিন্তু যখন এ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সমালোচনা হয় তখন তার কাছ থেকে টাকা ফেরৎ নিয়ে ব্যাংকের তহবিলে ফেরৎ দেওয়া হয়। রিয়া খাতুনকে হাজিরা খাতায় উপস্থিত দেখানো এবং ভুয় বেতন বানানোর ব্যপারে প্র¤œ করলে তার সঠিক কোন উত্তর দিতে পারেননি।
উল্লেখ্য যে, তারেক রহমান বঙ্গবন্ধু পরিষদের রুপালী ব্যাংক পিএলসি জামালপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন বলে অনেক অভিযোগ পাওয়া যায়।
ব্যবস্থাপক তারেক হাসান ও প্রিন্সিপাল অফিসার কামরুন্নাহারের যোগসাজশে অপকর্মটি সংঘটিত হলেও তারেক হাসানকে বদলি করা হলেও কামরুন্নাহারের বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমুলক ব্যবস্থা ওেয়া হয়নি এবং কোন তদন্ত্র কমিটি গঠন না করে ঘটনার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা না নেওয়ার রুপালী পএিলসির উর্ধতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সচেতন মহলে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃস্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে উপ মহা ব্যবস্থাপক মনির উদ্দিন ভূ্ইঁয়ার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি শাখা ব্যবস্থাপ্কের সাথে কথা বলতে বলেন। মহা ব্যবস্থাপক ইকবাল হোসেন খানের সাথে যোগাযোগের জন্য বারবার চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয় নি।