মোঃ আব্দুল্লাহ আল মুকিম রাজু, পঞ্চগড় প্রতিনিধি,
উত্তরবঙ্গের পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের বার আউলিয়া গ্রামে অবস্থিত বারো আউলিয়া মাজার, বাংলাদেশের অন্যতম পবিত্র ও ঐতিহাসিক ধর্মীয় স্থান হিসেবে পরিচিত। এই মাজারটি বারজন সুফি সাধকের সমাধিস্থল, যারা সপ্তদশ শতকে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আগত হয়ে এই অঞ্চলে আস্তানা গড়েছিলেন।
জনশ্রুতি অনুযায়ী, হেমায়েত আলী শাহ (রহ.), নিয়ামত উল্লাহ শাহ (রহ.), কেরামত আলী শাহ (রহ.), আজহার আলী শাহ (রহ.), হাকিম আলী শাহ (রহ.), মনসুর আলী শাহ (রহ.), মমিনুল শাহ (রহ.), শেখ গরীবুল্লাহ (রহ.), আমজাদ আলী মোল্লা (রহ.), ফরিজউদ্দিন আখতার (রহ.), শাহ মোক্তার আলী (রহ.) এবং শাহ অলিউল্লাহ (রহ.) নামের এই বারজন ওলী প্রথমে চট্টগ্রামে আস্তানা গড়েন। পরবর্তীতে তারা ইসলাম প্রচার করতে করতে উত্তরবঙ্গের পঞ্চগড়ে এসে মির্জাপুর ইউনিয়নে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন এবং এখানেই তাদের সমাধি স্থাপন করা হয়।
মাজারটি প্রায় ৪৭.৭৩ একর জমির উপর অবস্থিত। ১৯৯০ সালে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদের উদ্যোগে মাজারটি পাকা করা হয় এবং আশেপাশের এলাকায় গোরস্থান, পুকুর, মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানা নির্মাণ করা হয়।
প্রতি বছর বৈশাখ মাসের শেষ বৃহস্পতিবার মাজার প্রাঙ্গণে বার্ষিক ওরশ মোবারক অনুষ্ঠিত হয়। এই উপলক্ষে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, মাজার জিয়ারত, ওয়াজ মাহফিল, মিলাদ মাহফিল ও তোবারক বিতরণের আয়োজন করা হয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কয়েক লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি এই ওরশে অংশগ্রহণ করেন।
বারো আউলিয়া মাজার শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় স্থান নয়, এটি পঞ্চগড় জেলার ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক। এই মাজারে ভ্রমণ করে দর্শনার্থীরা আধ্যাত্মিক প্রশান্তি লাভের পাশাপাশি বাংলাদেশের সুফি ঐতিহ্যের এক অনন্য দৃষ্টান্তের সাক্ষী হতে পারেন।