ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
ব্রাহ্মণপাড়ায় প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বীজ ও সার বিতরণ  ব্রাহ্মণপাড়া জাতীয় নাগরিক পার্টির এনসিপির উদ্যোগে বৃক্ষরোপন কর্মসূচি  হিজলায় ৫ বছরের শিশুকে ধর্ষণচেষ্টা, আসামি গ্রেপ্তার। হত্যা মামলার আসামী রুম্মান হাওলাদার র‌্যাব কর্তৃক রাজধানীর আজিমপুর হতে গ্রেফতার। বিএনপির উদ্যোগে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি পালন বানারীপাড়া পৌর শহরের সড়কগুলো খানাখন্দে বেহাল: অন্তহীন জনদুর্ভোগ রাণীশংকৈলে ছাত্র জনতার জুলাই গনঅভ্যুত্থানে শহীদের স্মরণে বৃক্ষরোপণ ও আলচনা সভা  রাজশাহীতে রাসেল ভাইপার সাপের কামড়ে কৃষকের মৃত্যু  মেলা থেকে অন্তত একটি গাছ কেনার আহ্বান রাজশাহী নগরীতে অপহৃত স্কুলছাত্রী উদ্ধার গ্রেফতার অপহরণকারী বিশাল 

অবৈধ ইটভাটায় করাতকল বসিয়ে পুড়ছে বনভূমির কাঠ ও সন্ধ্যা নদীর চরের মাটি !

বানারীপাড়ায় অবৈধ ইটভাটায় করাতকল বসিয়ে পুড়ছে বনভূমির কাঠ ও সন্ধ্যা নদীর চরের মাটি !

 

রাহাদ সুমন, বানারীপাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি॥ বরিশালের বানারীপাড়ায় ইট ভাটার মালিকদের বিরুদ্ধে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইন অমান্য করে ভাটাগুলোতে বনভূমি উঁজাড় এবং ফসলি জমি ও সন্ধ্যা নদীর তীরে জেগে ওঠা চরের মাটি কেটে সাবাড় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা নিজেদের খেয়াল খুশি মতো সংরক্ষিত আবাসিক জনবসতি, বানিজ্যিক এলাকা, বনভুমি, জলা ভূমি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে ও কৃষি জমিতে ইটভাটা, পাজা ইট ভাটা ও ক্লিন ভাটা স্থাপন করে ব্যবসা করছেন। এ উপজেলায় ২৫/৩০টি লাইসেন্স বিহীন অবৈধ ইট ভাটা, পাজা ইট ভাটা ও ক্লিন ভাটা রয়েছে।

জানা গেছে, এর মধ্যে মাত্র দুটি ইটভাটার লাইসেন্স রয়েছে। ভাটায় কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কয়লার পরিবর্তে বানারীপাড়ার সিংহভাগ ভাটায় পোড়ান হচ্ছে মূল্যবান বনজ, ফলদ ও ঔষধি গাছ। ফলে উঁজাড় হয়ে যাচ্ছে এলাকার বনভূমি। হাজার হাজার বৃক্ষ গ্রাস করে ফেলছে ভাটাগুলো। এ উপজেলায় খেজুর গাছ ও এর সুস্বাদু ‘রস’ এখন গল্পে পরিণত হয়েছে। এলাকার প্রায় সব খেজুর গাছ ভাটায় পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।

ফলে পরিবেশের ভারসাম্যহীণতা দেখা দিয়েছে। ইট প্রস্তুতে সন্ধ্যা নদীর তীরে জেগে ওঠা বিশাল চর ও নদীর শাখা খালের মাটি কেটে একটি চক্র ভাটায় বিক্রি করার ফলে নতুন করে নদী ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া ফসলি জমির মাটিও কেটে ভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। এসব পরিবেশ দেখলে মনে হবে এখানে সরকারি আইন চলে না চলে ভাটা মালিকদের গড়া নিজস্ব আইন কানুন।

ভাটার বিষাক্ত ধুলো বালি, কালো ধোঁয়া ও আগুনের তাপে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে নিকটবর্তী এলাকার সবুজ বনজ সম্পদ এবং মাতৃত্ব হারাচ্ছে ফলদ গাছ। ভাটার আগুনের তাপে উর্বরতা হারিয়ে দিন দিন অভিশপ্ত মরুভুমিতে পরিণত হচ্ছে ফসলি জমি। চরমভাবে দুষিত হচ্ছে পরিবেশ। শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে ভুগছেন ভাটার পার্শ্ববর্তী এলাকার শিশুসহ সব বয়সের মানুষ।

বির্পযয়ের মুখে পতিত হচ্ছে এলাকার জনস্বাস্থ্য। ভাটাগুলো লোকালয়ের নিকটবর্তী হওয়ার কারনে চরম মূল্য দিতে হচ্ছে সাধারন মানুষের। ইট পোড়ানোর ঝাঁজালো উৎকট গন্ধে ভারি হয়ে আসে এখানকার বাতাস। উপজেলার বাইশারী, সৈয়দকাঠি ও ইলুহার ইউনিয়নে বেশ কয়েকটি ইট ভাটায় স্ব-মিল বসিয়ে বনভূমি উঁজাড় করার উৎসবে তারা মেতে রয়েছেন।

এ ছাড়াও বেশ কয়েকটি ভাটায় টিনের চোঙ্গা বসিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে। উপজেলার বানারীপাড়া সদর ইউনিয়নের কাজলাহার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং জম্বদীপ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় লাগোয়া জনবসতি এলাকাসহ সৈয়দকাঠি ইউনিয়নের মসজিদ বাড়ি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ইসলামিয়া কলেজ, দারুসসুন্নাত আলিম মাদরাসা, নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ও তালাপ্রসাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন বেশ কয়েকটি ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে। ফলে ওইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোমলমতিসহ শিক্ষার্থী,শিক্ষক ও এলাকাবাসী চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।

জানা গেছে, পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে প্রতি বছর লোক দেখানে দায়সাড়া অভিযান পরিচালনা করায় কোন ভাবেই বন্ধ হচ্ছেনা এসব অবৈধ ইট ভাটা। অভিযোগ রয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা ও স্থাণীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভাটা মালিকরা অবৈভাবে ভাটাগুলো পরিচালনা করে আসছেন।

এ অভিযোগ স্বীকার করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ভাটা মালিক জানান, সংশ্লিষ্ট সবাইকে ম্যানেজ করেই তারা ভাটা পরিচালনা করে থাকেন।

অবৈধ ইটভাটার বিষয়ে জিরো টলারেন্স অবস্থানের কথা জানিয়ে বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. বায়েজিদুর রহমান বলেন, শিগগিরই এসব ভাটার বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান (ভ্রাম্যমান আদালত) পরিচালনা করা হবে। এদিকে এলাকার সচেতন মহল পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসনের কাছে ইট প্রস্তুত আইনের সঠিক প্রয়োগ কামনা করছেন।

 

 

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ব্রাহ্মণপাড়ায় প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বীজ ও সার বিতরণ 

অবৈধ ইটভাটায় করাতকল বসিয়ে পুড়ছে বনভূমির কাঠ ও সন্ধ্যা নদীর চরের মাটি !

আপডেট সময় ১১:৫০:০৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

 

রাহাদ সুমন, বানারীপাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি॥ বরিশালের বানারীপাড়ায় ইট ভাটার মালিকদের বিরুদ্ধে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইন অমান্য করে ভাটাগুলোতে বনভূমি উঁজাড় এবং ফসলি জমি ও সন্ধ্যা নদীর তীরে জেগে ওঠা চরের মাটি কেটে সাবাড় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা নিজেদের খেয়াল খুশি মতো সংরক্ষিত আবাসিক জনবসতি, বানিজ্যিক এলাকা, বনভুমি, জলা ভূমি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে ও কৃষি জমিতে ইটভাটা, পাজা ইট ভাটা ও ক্লিন ভাটা স্থাপন করে ব্যবসা করছেন। এ উপজেলায় ২৫/৩০টি লাইসেন্স বিহীন অবৈধ ইট ভাটা, পাজা ইট ভাটা ও ক্লিন ভাটা রয়েছে।

জানা গেছে, এর মধ্যে মাত্র দুটি ইটভাটার লাইসেন্স রয়েছে। ভাটায় কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কয়লার পরিবর্তে বানারীপাড়ার সিংহভাগ ভাটায় পোড়ান হচ্ছে মূল্যবান বনজ, ফলদ ও ঔষধি গাছ। ফলে উঁজাড় হয়ে যাচ্ছে এলাকার বনভূমি। হাজার হাজার বৃক্ষ গ্রাস করে ফেলছে ভাটাগুলো। এ উপজেলায় খেজুর গাছ ও এর সুস্বাদু ‘রস’ এখন গল্পে পরিণত হয়েছে। এলাকার প্রায় সব খেজুর গাছ ভাটায় পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।

ফলে পরিবেশের ভারসাম্যহীণতা দেখা দিয়েছে। ইট প্রস্তুতে সন্ধ্যা নদীর তীরে জেগে ওঠা বিশাল চর ও নদীর শাখা খালের মাটি কেটে একটি চক্র ভাটায় বিক্রি করার ফলে নতুন করে নদী ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া ফসলি জমির মাটিও কেটে ভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। এসব পরিবেশ দেখলে মনে হবে এখানে সরকারি আইন চলে না চলে ভাটা মালিকদের গড়া নিজস্ব আইন কানুন।

ভাটার বিষাক্ত ধুলো বালি, কালো ধোঁয়া ও আগুনের তাপে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে নিকটবর্তী এলাকার সবুজ বনজ সম্পদ এবং মাতৃত্ব হারাচ্ছে ফলদ গাছ। ভাটার আগুনের তাপে উর্বরতা হারিয়ে দিন দিন অভিশপ্ত মরুভুমিতে পরিণত হচ্ছে ফসলি জমি। চরমভাবে দুষিত হচ্ছে পরিবেশ। শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে ভুগছেন ভাটার পার্শ্ববর্তী এলাকার শিশুসহ সব বয়সের মানুষ।

বির্পযয়ের মুখে পতিত হচ্ছে এলাকার জনস্বাস্থ্য। ভাটাগুলো লোকালয়ের নিকটবর্তী হওয়ার কারনে চরম মূল্য দিতে হচ্ছে সাধারন মানুষের। ইট পোড়ানোর ঝাঁজালো উৎকট গন্ধে ভারি হয়ে আসে এখানকার বাতাস। উপজেলার বাইশারী, সৈয়দকাঠি ও ইলুহার ইউনিয়নে বেশ কয়েকটি ইট ভাটায় স্ব-মিল বসিয়ে বনভূমি উঁজাড় করার উৎসবে তারা মেতে রয়েছেন।

এ ছাড়াও বেশ কয়েকটি ভাটায় টিনের চোঙ্গা বসিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে। উপজেলার বানারীপাড়া সদর ইউনিয়নের কাজলাহার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং জম্বদীপ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় লাগোয়া জনবসতি এলাকাসহ সৈয়দকাঠি ইউনিয়নের মসজিদ বাড়ি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ইসলামিয়া কলেজ, দারুসসুন্নাত আলিম মাদরাসা, নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ও তালাপ্রসাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন বেশ কয়েকটি ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে। ফলে ওইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোমলমতিসহ শিক্ষার্থী,শিক্ষক ও এলাকাবাসী চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।

জানা গেছে, পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে প্রতি বছর লোক দেখানে দায়সাড়া অভিযান পরিচালনা করায় কোন ভাবেই বন্ধ হচ্ছেনা এসব অবৈধ ইট ভাটা। অভিযোগ রয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা ও স্থাণীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভাটা মালিকরা অবৈভাবে ভাটাগুলো পরিচালনা করে আসছেন।

এ অভিযোগ স্বীকার করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ভাটা মালিক জানান, সংশ্লিষ্ট সবাইকে ম্যানেজ করেই তারা ভাটা পরিচালনা করে থাকেন।

অবৈধ ইটভাটার বিষয়ে জিরো টলারেন্স অবস্থানের কথা জানিয়ে বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. বায়েজিদুর রহমান বলেন, শিগগিরই এসব ভাটার বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান (ভ্রাম্যমান আদালত) পরিচালনা করা হবে। এদিকে এলাকার সচেতন মহল পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসনের কাছে ইট প্রস্তুত আইনের সঠিক প্রয়োগ কামনা করছেন।