মোতালেব বিশ্বাস লিখন, ইবি প্রতিনিধি।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর রহস্যজনক মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত এবং প্রশাসনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (২৬ জুলাই) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা প্রাঙ্গণ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রশাসন ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এসময় শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবার ঘোষণা দেন। পরে দুপুর দেড়টার দিকে আন্দোলন শেষ করেন শিক্ষার্থীরা।
এসময় শিক্ষার্থীরা, জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে, লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে, একশন টু একশন, ডাইরেক্ট একশন, আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না, পুকুরে লাশ কেন?—প্রশাসন জবাব চাই, আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে, বিচার চাই বিচার চাই, সাজিদ হত্যার বিচার চাই, আপোষ না সংগ্রাম সংগ্রাম, জুলাই যোদ্ধা কবরে—ভিসি-প্রক্টর কি করে?’ ‘জাস্টিস, জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’—এমন নানা স্লোগানে দিতে দেখা যায়।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. নাসির উদ্দিন মিঝি, ইবির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, শাখা ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির, ছাত্র ইউনিয়ন, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, খেলাফত ছাত্র মজলিস, জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়ার নেতৃবৃন্দসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
এসময় বক্তারা বলেন, সাজিদ আমাদের ভাই। আমাদের জানা উচিত এটা স্বাভাবিক মৃত্যু নাকি হত্যা। এটা যদি হত্যাকাণ্ড হয় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটা শিক্ষার্থী হুমকির মুখে পড়বে। আমার ভাইয়ের মৃত্যু যেভাবেই হোক না কেন অতিদ্রুত তদন্ত করে তা আমাদের সামনে তুলে ধরতে হবে। এখনো আমরা প্রশাসনের পদক্ষেপ দেখতে পাচ্ছি না। কালক্ষেপণ না করে অতিদ্রুত সাজিদ হত্যার বিচার করতে হবে, নইলে ইবির বুকে আবারও জুলাই নেমে আসবে।
সাজিদের বন্ধু ইনসানুল ইমাম বলেন, সাজিদের লাশ উদ্ধারের পর থেকেই আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। প্রশাসন আমাদের ছয় দিনের কথা বলেছিল, কিন্তু আমরা এখনো কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখিনি। প্রশাসন এখন পর্যন্ত তদন্ত কমিটিতে ছাত্র প্রতিনিধি যুক্ত করে নাই। সাজিদের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে আমরা একত্রিত হয়েছি, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাব। যদি আমরা সামনেও প্রশাসনের গড়িমসি দেখতে পাই তাহলে আরও কঠোর আন্দোলনে যাবো।
শাখা ছাত্রশিবির সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, ফ্যাসিবাদের পতনের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠন, সামাজিক সংগঠনগুলো অনেক দাবিদাওয়া দিয়েছে, স্মারকলিপি দিয়েছে কিন্তু প্রশাসনের কোনো ভ্রুক্ষেপ আমরা দেখতে পাই নাই। ছাত্রশিবির ১১০ দফা দাবি দিয়েছে। দুই তিন মাস গবেষণা করে, স্টাডি করে দাবিগুলো দেওয়া হয়েছে, কিন্তু প্রশাসন সেটা কতটুকু স্টাডি করে আর কতটুকু ইমপ্লিমেন্ট করে তা আমাদের জানা নাই। যে গদিতে বসেছে সে গদি থেকে যেন নড়াচড়া না করা লাগে, সেরকম পদক্ষেপ নিয়েই প্রশাসন হাঁটছেন। প্রশাসনকে আমরা যতটা গতিশীল দেখতে চেয়েছিলাম, তার ন্যূনতম গতি আমরা দেখি নাই।
শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহমেদ বলেন, সাজিদের মৃত্যুর সঠিক তদন্ত চেয়ে শিক্ষার্থীরা যে দাবি তুলে ধরেছে, আমরা ছাত্র সংগঠনরা সম্মতি জানিয়েছি। এমতাজ স্যারের নেতৃত্বে যে তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে, তাদের কাছে আমাদের দাবি—সাজিদের এই রহস্যজনক মৃত্যুর সঠিক তদন্ত করা হোক। আর এটা যদি হত্যা হয়, তাহলে দোষীদের অতিদ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সুষ্ঠু তদন্ত না হওয়া অবধি আমরা এ আন্দোলন চালিয়ে যাব, তবে আমাদের আন্দোলন হবে ন্যায়ভিত্তিক ও যৌক্তিক।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, আমাদের যথাসময়েই সুষ্ঠু তদন্ত চাই এবং যদি হত্যাকাণ্ড হয় তাহলে দ্রুত জড়িতদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। প্রশাসনকে বলছি সময় থাকতে সঠিক পথে ফিরে আসুন। অন্যথায়, আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে দুর্বার গণআন্দোলনের পথে হাঁটবো। তখন আর আপনাদের কোনো কিছু করার থাকবে না। আমরা নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দিয়ে সার্বিকভাবে প্রশাসনকে জবাবদিহির আওতায় আনবো। এটি শুধু একটি মৃত্যুর বিচার নয়—এটি ন্যায়ের পক্ষে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের স্বোচ্চার অবস্থান।
দুর্নীতি শ্বেতপত্রের ব্যাপারে তিনি বলেন, দুর্নীতির শ্বেতপত্র আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি। গত ১৫ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কী পরিমাণ দূর্নীতি হয়েছে তা শিক্ষার্থীরা জানতে চাই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের প্রতিনিধি হিসেবে ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. ওবায়দুল ইসলাম বলেন, আমরা তোমাদের আন্দোলনের সঙ্গে আন্তরিকভাবে একাত্মতা প্রকাশ করছি। এই ঘটনায় কীভাবে সুষ্ঠু তদন্ত করা যায়, সে লক্ষ্যে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে সাজিদ আব্দুল্লাহর ভিসেরা রিপোর্ট আমাদের হাতে আসবে বলে আশা করছি। সেই রিপোর্ট হাতে পেলেই আমরা পুরো বিষয়টি সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট ধারণা দিতে পারব।
তিনি আরও বলেন, যদি রিপোর্টে প্রমাণিত হয় যে এটি কোনো অপমৃত্যু বা অপরাধজনিত ঘটনা এবং যদি কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে তাকে আইনের আওতায় আনতে আমরা একটুও দ্বিধা করব না। আমাদের উপাচার্য মহোদয় বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নজরদারি করছেন এবং প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন।