ঢাকা , শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
পেকুয়ায় ডেভিল হান্ট অভিযানে নিষিদ্ধ আ.লীগের ১১ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার কালীগঞ্জে প্রতিবন্ধি ও অসহায় পরিবারের মাঝে বিনামূল্যে ছাগল বিতরণ রাণীশংকৈলে ৩ দিন ব্যাপী জাতীয় ফল মেলার উদ্বোধন বর্ষা আসলেই দাগনভূঁইয়ার ইয়াকুবপুর ইউনিয়নের জনগণর চলাচলের রাস্তার বেহাল দশা গ্লোবাল ইয়ুথ লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ পাচ্ছেন বরিশালের সন্তান সাংবাদিক নিয়াজ মাহমুদ নকলায় উদ্বোধন করা হল ৩ দিনব্যাপি জাতীয় ফল মেলা ‎একমাত্র জীবিত জমিদারের দৃষ্টিনন্দন বাড়িটি দেখতে পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে  নাইক্ষ্যংছড়িতে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত ডা. জোবায়দা রহমানের জন্মবার্ষিকীতে আজাদ’ র শুভেচ্ছা বুড়িচংয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির মানববন্ধন অনুষ্ঠিত

‎একমাত্র জীবিত জমিদারের দৃষ্টিনন্দন বাড়িটি দেখতে পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে 

‎একমাত্র জীবিত জমিদারের দৃষ্টিনন্দন বাড়িটি দেখতে পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে 

 

‎মাহফুজ রাজা, স্টাফ রিপোর্টার : বলছি, কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের গাঙ্গাটিয়া গ্রামের জমিদার বাড়িটির গল্প।এই বাড়িটিতেই থাকেন বাংলাদেশের একমাত্র জীবিত জমিদার মানব বাবু।

‎বাংলাদেশে ঐতিহাসিক নিদর্শনের মধ্যে অন্যতম প্রাচীন আমলের জমিদার বাড়িগুলি। এগুলো দেশের আনাচে-কানাচে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। খুঁজলে মিলবে এসব জমিদার বাড়ির ভিন্ন ভিন্ন কালজয়ী ইতিহাসও। এমন অনেক জমিদার বাড়ির নিদর্শনের মধ্যে গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ি কিংবা মানব বাবুর বাড়ি ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে সমধিক পরিচিত।

প্রাচীন ঐতিহ্যের এই স্থাপনাটি দেখতে প্রতিনিয়ত দেশি-বিদেশি পর্যটক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ ভিড় করে।জমিদার বাড়িটি সংস্কার করে দৃষ্টিনন্দন করতে পারলে এটিও হতে পারে দর্শনীয় স্থানের একটি বলে মনে করছেন পর্যটকরা।


সরজমিনে দেখা যায়, জমিদার বাড়ির মূল ফটকের সামনেই রয়েছে বিশাল আকারের একটি দৃষ্টিনন্দন পুকুর যার নাম সাগরদিঘী।

‎জানা যায়, এই সাগরদিঘির পাড়ে গড়ে উঠেছিল একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং সেন্টার, মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং সেন্টার দেয়ার অজুহাতে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী রাজাকারদের যুগ সাজেসে পাকিস্তানি সেনারা (মানব বাবুর) স্বর্গীয় পিতা ভূপতিনাথ চক্রবর্তীকে গুলি করে নির্মম ভাবে হত্যা করে।

এছাড়াও, তারা লুটপাট করে জমিদার বাড়ির মূল্যবান স্বর্ণালংকারসহ দামি-দামি জিনিসপত্র নিয়ে গিয়ে ধ্বংসলীলা চালিয়েছিল। জমিদারি প্রথা উঠে গেলেও গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়িটি প্রাচীন ঐতিহ্যের ধারক-বাহক হয়ে এখনো পুরাতন জরাজীর্ণ স্থাপনার মাঝে সাগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে


বাড়ির ভেতরে স্থাপনাগুলো চমৎকার কারুকাজে ভরা। এগুলো দেখে পথিকরা এখনো থমকে দাঁড়ায়। জমিদার বাড়ির নহবতখানা, দরবারগৃহ ও মন্দির বিশেষ স্থাপত্যের নিদর্শন। ঢাকা থেকে আসা পর্যটকদের একজন বজলুর রশিদ জানান, এই জমিদার বাড়িটি অনেক পুরনো। অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে এতে। প্রতিদিন এটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা আসেন।অফিস থেকে ছুটি নিয়ে তিনি সপরিবারে আসছেন। বাংলাদেশ সরকারের কাছে জমিদার বাড়িটি সংস্কার করে দৃষ্টিনন্দন করার দাবি জানান তিনি।

গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ির একমাত্র উত্তরাধিকার ৮০উর্দ্ধ বয়স্ক মানবেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী (মানব বাবুর) সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, প্রকৃতপক্ষে জমিদার বাড়ীগুলি ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে দর্শনার্থীদের মনের খোরাক ছাড়া আর কিছুই না। তিনি আরো বলেন, ১৯৮৪ সালে আমি উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলাম।


এখন অনেক বয়স হয়েছে। 
অনেক স্মৃতি জড়িয়ে থাকা নিজের ভিটামাটিও ভালোভাবে দেখতে পারি না বয়সের ভারে। মানুষের কল্যাণে কাজ করে শেষ নিঃশ্বাসটুকুন এই জমিদার বাড়িতেই ত্যাগ করতে চাই। পর্যটকরা আসে আমার ভালো লাগে তাদের সাথে সময়টা হাসি খুশিতে কেটে যায়।

‎খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতাব্দীর দিকে গাঙ্গাটিয়া জমিদার বংশের পূর্ব পুরুষেরা ভারতের উত্তর প্রদেশ থেকে এসে এ দেশে বসতি স্থাপন করেন। তৎকালীন গৌড়ীয় রীতি অনুযায়ী বাড়ির পতিত ভিটায় পূজা অর্চনার জন্য একটি শিব মন্দির তৈরি করেন। শিব মন্দিরটি এখনো এই বংশের প্রথম নির্মিত মন্দির বলে এখনো দণ্ডায়মান। জমিদারদের ধারাবাহিকতায় এ অঞ্চলে অতুল বাবুর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ইংরেজ আমলে শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি ব্যাপক প্রসার লাভ করে।

তাদের পরবর্তী বংশধর খ্যাতিমান সাহিত্যিক, গবেষক ও হাইকোর্টের জজ ধারনাথ চক্রবর্তী এ জমিদার পরিবারের ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমৃত্যু নিরলস চেষ্টা করেন।ফলে, জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির পরও এখনো এ বাড়িতে জমিদারের একমাত্র জীবিত বংশধর মানবেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী বসবাস করছেন।

আপলোডকারীর তথ্য

news room

জনপ্রিয় সংবাদ

পেকুয়ায় ডেভিল হান্ট অভিযানে নিষিদ্ধ আ.লীগের ১১ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার

‎একমাত্র জীবিত জমিদারের দৃষ্টিনন্দন বাড়িটি দেখতে পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে 

আপডেট সময় ১১:১০:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫

 

‎মাহফুজ রাজা, স্টাফ রিপোর্টার : বলছি, কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের গাঙ্গাটিয়া গ্রামের জমিদার বাড়িটির গল্প।এই বাড়িটিতেই থাকেন বাংলাদেশের একমাত্র জীবিত জমিদার মানব বাবু।

‎বাংলাদেশে ঐতিহাসিক নিদর্শনের মধ্যে অন্যতম প্রাচীন আমলের জমিদার বাড়িগুলি। এগুলো দেশের আনাচে-কানাচে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। খুঁজলে মিলবে এসব জমিদার বাড়ির ভিন্ন ভিন্ন কালজয়ী ইতিহাসও। এমন অনেক জমিদার বাড়ির নিদর্শনের মধ্যে গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ি কিংবা মানব বাবুর বাড়ি ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে সমধিক পরিচিত।

প্রাচীন ঐতিহ্যের এই স্থাপনাটি দেখতে প্রতিনিয়ত দেশি-বিদেশি পর্যটক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ ভিড় করে।জমিদার বাড়িটি সংস্কার করে দৃষ্টিনন্দন করতে পারলে এটিও হতে পারে দর্শনীয় স্থানের একটি বলে মনে করছেন পর্যটকরা।


সরজমিনে দেখা যায়, জমিদার বাড়ির মূল ফটকের সামনেই রয়েছে বিশাল আকারের একটি দৃষ্টিনন্দন পুকুর যার নাম সাগরদিঘী।

‎জানা যায়, এই সাগরদিঘির পাড়ে গড়ে উঠেছিল একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং সেন্টার, মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং সেন্টার দেয়ার অজুহাতে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী রাজাকারদের যুগ সাজেসে পাকিস্তানি সেনারা (মানব বাবুর) স্বর্গীয় পিতা ভূপতিনাথ চক্রবর্তীকে গুলি করে নির্মম ভাবে হত্যা করে।

এছাড়াও, তারা লুটপাট করে জমিদার বাড়ির মূল্যবান স্বর্ণালংকারসহ দামি-দামি জিনিসপত্র নিয়ে গিয়ে ধ্বংসলীলা চালিয়েছিল। জমিদারি প্রথা উঠে গেলেও গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়িটি প্রাচীন ঐতিহ্যের ধারক-বাহক হয়ে এখনো পুরাতন জরাজীর্ণ স্থাপনার মাঝে সাগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে


বাড়ির ভেতরে স্থাপনাগুলো চমৎকার কারুকাজে ভরা। এগুলো দেখে পথিকরা এখনো থমকে দাঁড়ায়। জমিদার বাড়ির নহবতখানা, দরবারগৃহ ও মন্দির বিশেষ স্থাপত্যের নিদর্শন। ঢাকা থেকে আসা পর্যটকদের একজন বজলুর রশিদ জানান, এই জমিদার বাড়িটি অনেক পুরনো। অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে এতে। প্রতিদিন এটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা আসেন।অফিস থেকে ছুটি নিয়ে তিনি সপরিবারে আসছেন। বাংলাদেশ সরকারের কাছে জমিদার বাড়িটি সংস্কার করে দৃষ্টিনন্দন করার দাবি জানান তিনি।

গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ির একমাত্র উত্তরাধিকার ৮০উর্দ্ধ বয়স্ক মানবেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী (মানব বাবুর) সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, প্রকৃতপক্ষে জমিদার বাড়ীগুলি ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে দর্শনার্থীদের মনের খোরাক ছাড়া আর কিছুই না। তিনি আরো বলেন, ১৯৮৪ সালে আমি উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলাম।


এখন অনেক বয়স হয়েছে। 
অনেক স্মৃতি জড়িয়ে থাকা নিজের ভিটামাটিও ভালোভাবে দেখতে পারি না বয়সের ভারে। মানুষের কল্যাণে কাজ করে শেষ নিঃশ্বাসটুকুন এই জমিদার বাড়িতেই ত্যাগ করতে চাই। পর্যটকরা আসে আমার ভালো লাগে তাদের সাথে সময়টা হাসি খুশিতে কেটে যায়।

‎খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতাব্দীর দিকে গাঙ্গাটিয়া জমিদার বংশের পূর্ব পুরুষেরা ভারতের উত্তর প্রদেশ থেকে এসে এ দেশে বসতি স্থাপন করেন। তৎকালীন গৌড়ীয় রীতি অনুযায়ী বাড়ির পতিত ভিটায় পূজা অর্চনার জন্য একটি শিব মন্দির তৈরি করেন। শিব মন্দিরটি এখনো এই বংশের প্রথম নির্মিত মন্দির বলে এখনো দণ্ডায়মান। জমিদারদের ধারাবাহিকতায় এ অঞ্চলে অতুল বাবুর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ইংরেজ আমলে শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি ব্যাপক প্রসার লাভ করে।

তাদের পরবর্তী বংশধর খ্যাতিমান সাহিত্যিক, গবেষক ও হাইকোর্টের জজ ধারনাথ চক্রবর্তী এ জমিদার পরিবারের ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমৃত্যু নিরলস চেষ্টা করেন।ফলে, জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির পরও এখনো এ বাড়িতে জমিদারের একমাত্র জীবিত বংশধর মানবেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী বসবাস করছেন।