নিজস্ব প্রতিবেদক
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে এক জনকে হত্যাচেষ্টা মামলায়; র্যাব-১১ এর অভিযানে আরো ০১ জন আসামি গ্রেপ্তার।
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-১১ গত ০৫ আগষ্ট ২০২৪ তারিখ হতে অদ্যবধি দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় বিভিন্ন অভিযানে চাঞ্চল্যকর অপরাধী ১০৪ জন, আরসা সদস্য-১৫ জন, হত্যা মামলায় ১৩০ জন গ্রেফতার, ধর্ষণ মামলায় ৫৪ জন গ্রেফতার, অস্ত্র সংক্রান্ত মামলায় ১৭ জন গ্রেফতারসহ ৮৬ টি অস্ত্র, ১২৮৬ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার এবং ২৯৬ জন এর অধিক মাদক কারবারি গ্রেফতারসহ বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার করে র্যাব-১১। পাশাপাশি ৪৬ জন অপহরণকারী গ্রেফতারসহ ৪৯ জন ভিকটিম উদ্ধার এবং ছিনতাইকারী ও ডাকাত ৫৮ জন, জেল পলাতক ৩৬ জন, প্রতারণার আসামী-১২ জন সহ অন্যান্য অপরাধী প্রায় ২৯৫ জনকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে র্যাব-১১ জনগণের সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
গত ২৪ জুন ২০২৪ তারিখ নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানাধীন টাটকী সাকিনস্থ বসত বাড়িতে একটি হত্যা চেষ্টার ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে উক্ত ঘটনায় ভিকটিম এর ভাই বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন, যার মামলা নং- ৩১(৬) ২৪; জিআর নং-২৭৯/২৪ ধারা- ১৪৩/৪৪৭/৪৪৮/৩২৩/ ৩২৫/৩২৬/৩০৭/৩৫৪/৪২৭/৩৭৯/৩৮০/৫০৬ পেনাল কোড-১৮৬০। উক্ত ঘটনার সাথে জড়িত আসামীকে দ্রæত সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র্যাব-১১ গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি
করে।
ঘটনা সূত্র ও এজাহার পর্যালোচনায় জানা যায় যে, গত ইং ২৪/০৬/২০২৪ তারিখ বিকাল অনুমান ০৪.৩০ ঘটিকার সময় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে আসামীসহ তাদের সঙ্গীয় ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী প্রকৃতির অজ্ঞাত নামা আরো ১০/১৫ জন আসামীরা ধারালো রামদা, চাপাতি, চাইনিজ কুড়াল, সুইচ গিয়ার চাকু, ছুড়া, ছেনদা, এসএস স্টিলের পাইপ, লোহার রড ও হকিস্টিক হাতে সজ্জিত হয়ে বেআইনি জোটবন্ধে রূপগঞ্জ থানাধীন টাটকী সাকিনস্থ ভিকটিমের বসত বাড়ীতে অনধিকার প্রবেশ করে বাড়ীর দরজা, জানালা, গেটসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাংচুর করে ও কোপাইতে শুরু করে।
বাড়ীতে উপস্থিত ভিকটিম মোঃ নূর আলম (২৪) ঘর হতে বাহির হয়ে আসামীদের বাধা প্রদানের চেষ্টা করলে আসামীরা ভিটিমের উপর আক্রমন করে এলোপাথারী ভাবে মারপিট করতে শুরু করে। ১নং আসামী শাহিন ওরফে ডিশ শাহিন (৩০) এর হাতে থাকা ধারালো রামদা দিয়া খুন করার উদ্দেশ্যে কোপ দিয়ে ভিকটিমের মাথায় গুরুতর কাটা রক্তাক্ত জখম করে। ৬নং আসামী মোঃ শান্ত (২৪) এর হাতে থাকা ধারালো রামদা দিয়া খুন করার উদ্দেশ্যে কোপ দিয়ে ভিকটিমের বাম কানের উপরের অংশে গুরুতর কাটা রক্তাক্ত জখম করে। ৩নং আসামী মোঃ রুবেল ভূইয়া (৩৫) এর হাতে পকা ধারালো চাপাতি দিয়া খুনের উদ্দেশ্যে কোপ দিয়ে ভিকটিমের পিঠে গুরুতর কাটা রক্তাক্ত জখম করে।
৪নং আসামী মোঃ প্রাবন ওরফে কুত্তা প্রাবন (২০) এর হাতে থাকা ধারালো চাইনিজ কুড়াল নিয়া খুন করার উদ্দেশ্যে ভিকটিমের মাথা বরাবর কোপ দিলে ভিকটিম জীবন রক্ষার্থে ডান হাতে দিয়ে ঠেকালে উক্ত কোপ ডান হাতের কব্জিতে লেগে গুরুতর কাটা রক্তাক্ত জখম হয়। সাথে সাথে ৫নং আসামী মোঃ মেহেদী ওরফে চুরা মেহেদী (২৪) এর হাতে থাকা ধারালো চাপাতি দিয়ে খুন করার উদ্দেশ্যে কোখ দিয়ে ভিকটিমের ডান হাতের কুনুইয়ের নিচে গুরুতর কাটা রক্তাক্ত জখম করে। ২নং আসামী মোঃ ররি খান (৩০) এর হাতে থাকা ধারালো সুইচ গিয়ার চাকু দিয়ে খাই (ফার) মেরে ভিকটিমের পেটের ভ‚ড়ি বাহির করিয়া গুরুতর কাটা রক্তাক্ত জখম করে। ৭নং আসামী মোঃ কাজল (২৫) এর হাতে থাকা ধারালো চাইনিজ কুড়াল দিয়া খুন করার উদ্দেশ্যে কোপ দিয়ে ভিকটিমের বুকের বাম পাশে গুরুতর কাঁটা রক্তাক্ত জখম করে।
৮নং আসামী মোঃ হৃদয় (২২) এর হাতে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে পোচ দিয়ে ভিকটিমের পিঠের বাম পাশে গুরুতর কাটা রক্তাক্ত জখম করে। ৯নং আসামী মোঃ মারুফ (১৯) এর হাতে থাকবা এস এস স্টীলের পাইপ দিয়ে স্বজোরে পিটিয়ে ভিকটিমের ডান হাতে গুরুতর হাড় ফাটা জখম করে। ১০ হইতে ১৫ নং আসামীরা লোহার রড, হকিস্টিক ও এসএস স্টীলের পাইপ দিয়ে এলোপাথারী ভাবে পিটিয়ে ভিকটিমের বুকে, পিঠে, কোমরসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক জখম করে। চিৎকার শুনিয়া ভিকটিমের মাতা মোসাঃ কলেমান নেছা (৬০) আগাইয়া এসে আসামীদের কবল হতে ভিকটিমকে রক্ষার চেষ্টা করিলে ১০, ১১ ও ১২নং আসামীরা এলোপাথারী ভাবে মারপিট করে ভিকটিমের মায়ের শরীরের বিভিন্ন স্থানে নীলাফুলা জখম করে। ১৩ ও ১৪নং আসামীদ্বয় ভিকটিমের মায়ের চুলের মুঠি ধরে টানা হেচড়া করে শ্রীলতাহানি ঘটায়। আসামীরা ভিকটিমের বসত বাড়ীর দরজা, জানাল, গেট ও বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাংচুর করে অনুমান ১,৫০,০০০/-টাকার ক্ষতি সাধন করে মারপিটের সময় ১নং আসামী আমার মায়ের গলায় থাকা ০১ ভরি ওজনের একটি স্বর্ণের চেইন নিয়া নেয়, মূল্য অনুমান ১,০০০০/-টাকা।
১,২.৩ ও ১৫নং আসামীরা ভিকটিমের ঘরে ঢুকে স্টীলের সোকেচের ড্রয়ার খুলে ব্যবসার নগদ ১,২০,০০০/-টাকা। ০২ ভরি ওজনের স্বর্নারংকার নিয়ে নেয়, মুল্য অনুমান ২২,০০০০০/ টাকা। ভিকটিমের চিৎকার ও আসামীদের হৈ চৈ শুনিয়া আশ পাশের লোকজন আসতে থাকলে আসামিরা দ্রুত চলিয়া যায়।
যাওয়ার সময় আসামীরা বলে যে, তাদের সাথে বেশি বারাবারি করিলে বা উক্ত ঘটনার বিষয়ে কোন মামলা করিলে ভিকটিম কে ও তার বাড়ীর লোকজনদেরকে রাস্তাঘাটে সুযোগমত পাইলে প্রাণে মেরে ফেলবে বলে হুমতি প্রদান করে। সংবাদ পাইয়া ভিকটিমের বড় ভাই ও অন্যান্যরা বাড়ীতে এসে দ্রুত ভিকটিমকে মুমুর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। বর্তমানে ভিকটিম ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ তে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।
উক্ত ঘটনার বিষয়ে ভিকটিমের বড় ভাই বাদী হয়ে এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে জানিয়ে রূপগঞ্জ থানায় একটি হত্যা চেষ্টা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং- ৩১(৬)২৪; জিআর নং-২৭৯/২৪ ধারা- ১৪৩/৪৪৭/৪৪৮/৩২৩/৩২৫/৩২৬/৩০৭/ ৩৫৪/ ৪২৭/৩৭৯/৩৮০/৫০৬ পেনাল কোড-১৮৬০। মামলাটি রুজু হওয়ার পর থেকে অজ্ঞাত নামা আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে র্যাব-১১, সিপিসি-১, নারায়ণগঞ্জ ছায়া তদন্ত শুরু করে।
পরবর্তীতে তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে এবং গোপন তথ্যের ভিত্তিতে উক্ত ঘটনার সাথে জড়িত সন্ধিগ্ধ আসামী মোঃ মেহেদী ওরফে চুরা মেহেদী (২৪) পিতা-মোঃ জাকির, গ্রাম-তারাব দক্ষিণপাড়া, রূপগঞ্জ, জেলা নারায়ণগঞ্জ’কে নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানাধীন কাস্টম অফিস এলাকা হতে এলাকা হতে ২৭/০৫/২০২৫ ইং তারিখ ১৬:৪৫ ঘটিকায় র্যাব-১১, সিপিসি-১, নারায়ণগঞ্জ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল আসামীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।