রফিকুল ইসলাম, কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ায় একটি ভাড়া বাস থেকে সুব্রত বাইন (৬০) নামের ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি করা দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসীকে সহযোগীসহ গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর “মৃত্যুঞ্জয়ী পঁচিশ” ২৫ ইস্ট বেঙ্গল ব্যাটালিয়নের একটি আভযানিক দল।
মঙ্গলবার (২৭ মে) ভোরের দিকে কুষ্টিয়া শহরের কালিশংকরপুর এলাকার সোনার বাংলা মসজিদের কাছাকাছি তিনতলা ভবনে অভিযান চালিয়ে নিচতলা থেকে দু’জনকে নিয়ে যায় সেনাবাহিনী। তাঁদের মধ্যে একজন সুব্রত বাইন, অপরজন তার অন্যতম সহযোগী আবু রাসেল মাসুদ ওরফে মোল্লা মাসুদ (৫৪)। দেড় মাস আগে তাঁরা ওই বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন।
পরবর্তীতে, তাদের নিকট হতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা হতে সুব্রত বাইন এর অপর দুই সহযোগী শ্যুটার আরাফাত এবং শরীফকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযানকালে ০৫ টি বিদেশী পিস্তল, ১০ টি ম্যাগাজিন, ৫৩ রাউন্ড এ্যামোনিশন এবং ০১ টি স্যাটেলাইট ফোন উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতদের নামে বিভিন্ন থানায় হত্যা ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন নাশকতামূলক কার্যক্রম সংক্রান্ত মামলা রয়েছে। উল্লেখ্য যে, সুব্রত বাইন এবং মোল্লা মাসুদ সেভেন স্টার সন্ত্রাসী দলের নেতা এবং “তালিকাভূক্ত ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীদের’’ অন্যতম।
স্থানীয়রা জানান, দেড় মাস আগে কালিশংকরপুর সোনার বাংলা সড়ক এলাকার মৃত মীর মহিউদ্দিনের তিনতলা বাড়ির নিচতলা ভাড়া নেন তারা। তাঁকে বাড়ি ভাড়া নিতে সহযোগিতা করেন স্থানীয় প্রবাসফেরত হেলাল নামের এক যুবক। ওই বাড়িতেই থাকতেন তাঁরা। বাড়ির নিচতলা ভাড়া নেওয়ার পর থেকে দরজা-জানালা খুলতে দেখেননি স্থানীয় বাসিন্দারা। ওপরের দোতলায় ছাত্রাবাস ছিল। আজ হঠাৎ ভোররাতে বাড়িটির তালা ভাঙার শব্দ পেয়ে ছুটে আসেন তাঁরা।
এরপর দেখতে পান সেনাবাহিনীর সদস্যরা বাড়িটি ঘিরে অভিযান চালাচ্ছেন। এর কিছুক্ষণ পর দু’জনকে গ্রেফতার করে সেনাবাহিনীর গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে জানতে পারেন, এই বাড়িতেই ভাড়া থাকতেন শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও তাঁর সহযোগীরা। এ ঘটনার পর অনেকটা শঙ্কিত স্থানীয়রা।
এ সময় রবিউল ইসলাম নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ফজরের নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে যাওয়ার সময় রাস্তায় ভোর ৪টার দিকে সেনাবাহিনীর গাড়ি দেখতে পাই। এ সময় মীর মহির উদ্দিনের বাড়ি ঘিরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা দাঁড়িয়ে ছিলেন।
জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা জানান, ছাত্রদের মেসে অভিযান চলছে। এরপর ওই বাড়ি থেকে দু’জনকে নিয়ে যাওয়া হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গোয়েন্দা সংস্থার এক সদস্য বলেন, ঢাকার একটি টিম অভিযান পরিচালনা করেছে। তারা দু’জনকে নিয়ে গেছে। জানতে পেরেছি, তাঁদের মধ্যে একজন সুব্রত বাইন।
সেনাবাহিনী উল্লেখ করেন, সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার সকালে অভিযানটি পরিচালনা করা হয়। অভিযান দলের দক্ষতায় কোনরূপ ক্ষয়ক্ষতি এবং নাশকতা ছাড়াই অভিযানটি সম্পন্ন হয় এবং অপরাধীদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়। উক্ত সফল অভিযান বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ফরমেশন, দেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এবং বাংলাদেশ পুলিশ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জননিরাপত্তা নিশ্চিত করণ ও আইনশৃংখলা রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ। যেকোন ধরণের অপরাধমূলক কার্যক্রম এর তথ্য নিকটস্থ সেনা ক্যাম্প অথবা আইনশৃংখলা বাহিনীকে অবহিত করার জন্য সর্বসাধারণকে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।