এম মনির চৌধুরী রানা : ঈদুল ফিতরের ন্যায় আসন্ন ঈদুল আজহায় স্বস্তিদায়ক ঈদযাত্রা নিশ্চিত করতে ধাপে ধাপে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার সুবিধার্থে ঈদের ছুটি ব্যবস্থাপনা ঠিক করে ঈদের আগে ছুটি বাড়ানোর দাবী জানিয়েছেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
আজ ২৭ মে মঙ্গলবার সকালে নগরীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি মহাসচিব মোঃ মোজাম্মেল হক চৌধুরী এই দাবী জানান।
তিনি বলেন, আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহায় সরকারের পক্ষ থেকে ১০ দিন ছুটি ঘোষণার বিষয়টি ইতিপূর্বে গণমাধ্যমে চাউর হয়েছে। কিন্তু কোন প্রকার সমীক্ষা ছাড়াই এই ছুটি ঘোষনা করায় দেশের যাত্রীসাধারন এবারের আসন্ন ঈদুল আজহায় ভয়াবহ দুর্ভোগে পড়তে যাচ্ছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে বিষয়টি সরকারের সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টদের জানানো হলেও তেমন কোন সাড়া মেলেনি।
তিনি আরো বলেন, যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বিগত ২৫ বছরের মধ্যে বিদায়ী পবিত্র ঈদুল ফিতরে স্বস্থিদায়ক ঈদযাত্রার পেছনে মূলত তিনটি কারন ছিল, ১। ঈদের আগে ৪ দিনের লম্বা ছুটি ২। সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও শ্রমিক ফেডারেশনের প্রভাবশালী মাফিয়া নেতারা পালিয়ে যাওয়ায় সড়কে মাস্তানিতন্ত্রের অবসান।
সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিআরটিএ, ভোক্তা অধিদপ্তরসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বিত আন্তরিক প্রচেষ্টার কারনে মানুষ ভোগান্তিমুক্ত যাতায়াত নিশ্চিত করা গেছে। এই কারনে ২০২৪ সালের ঈদুল ফিতরের তুলনায় ২০২৫ সালের ঈদুল ফিতরে সড়ক দুর্ঘটনা ২১.০৫ শতাংশ, নিহত ২০.৮৮ শতাংশ, আহত ৪০.৯১ শতাংশ কমেছিল। এই কারনে অন্তর্বর্তী সরকার নানা মহলের প্রশংসা কুড়িয়েছে। এবারের ঈদের লম্বা ছুটি বিন্যাস করে ঈদের আগে ৩ ও ৪ জুন ২ দিন ছুটি নিশ্চিত করা গেলে সড়ক দুর্ঘটনা, প্রাণহানি, যাতায়াতের ভোগান্তি কমানো সক্ষম হবে।
সংগঠনটির পর্যবেক্ষণ বলছে, অন্তর্বর্তী সরকার পবিত্র ঈদুল আজহায় আগামী ৫ জুন থেকে ১৪ জুন মোট ১০ দিনের ছুটি ঘোষণা করেছেন। লম্বা ছুটির কারনে এবারের ঈদে বেশি মানুষ গ্রামের বাড়ি যেতে পারে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি মনে করে, এবারের ঈদে ঢাকা থেকে ১ কোটি ১০ লাখ ও ঢাকার আশেপাশে জেলা থেকে আরো ৩০ লাখসহ ১ কোটি ৪০ লাখ থেকে দেড়কোটি মানুষ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করতে পারে।
৭ জুন পবিত্র ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হলে ঈদের আগে ৫ ও ৬ জুন বৃহস্পতি ও শুক্রবার মাত্র ২ দিনের সরকারি ছুটি রয়েছে। আর ৬ জুন ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হলে ঈদের আগে মাত্র ৫ জুন বৃহস্পতিবার ১ দিনের সরকারি ছুটি থাকে। ঈদের আগে ঈদের ছুটি ২ দিন হলে একদিনে ৭৫ লাখ করে দুই দিনে দেড়কোটি মানুষ গ্রামের বাড়ী পাঠাতে গেলে দেশের যাত্রীসাধারণ ভয়াবহ ভোগান্তিতে পড়তে হবে। অন্যদিকে ঈদের আগে ঈদের ছুটি ১ দিন হলে ১ দিনে দেড়কোটি মানুষ ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি পাঠানোর মত সড়ক, রেল, নৌ কোন পথের যানবাহনের সক্ষমতা আমাদের দেশে নেই।
এমনিতেই ঈদুল আজহায় সড়কের পাশে পশুরহাট ও পশুবাহী ট্রাক চলাচলের কারনে যানজট অব্যাহত থাকবে, ফলে যানবাহনের গতি কিছুটা কমে আসবে। এই ১ বা ২ দিনে ঢাকা থেকে ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ গ্রামের বাড়ি পাঠাতে রাস্তায় ভয়াবহ দুর্ভোগ তৈরী হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাহী আদেশে দেওয়া ১১ ও ১২ জুন ২ দিনের ছুটি বিন্যাস করে ঈদের আগে ৩ ও ৪ জুন মঙ্গল ও বুধবার এগিয়ে আনলে পবিত্র ঈদুল ফিতরের মত ঈদুল আজহায় ও স্বস্তিদায়ক ঈদযাত্রা নিশ্চিত হবে বলে দেশের যাত্রীসাধারণ মনে করে। তাই এহেন দুর্ভোগ কমাতে সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার সদয় দৃষ্টি আর্কষণ করেন সংগঠনটি।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোঃ মোজাম্মেল হক চৌধুরী আরো বলেন, ঈদের লম্বা ছুটি কেবল বিনোদনের জন্য নয়, মানুষের যাতায়াতের ভোগান্তি কমানো, ভাড়া নৈরাজ্য কমানো ও সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি কমানোর জন্য ব্যবহার করা জরুরী। তাই এই ছুটি ব্যবস্থাপনা ঠিক করে ঈদের আগে ছুটি বাড়ানো জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান তিনি।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়, ঈদের পরের ১১ ও ১২ জুনের ছুটি বাতিল করে ৩ ও ৪ জুন ছুটি নিশ্চিত করা গেলে দেশের মানুষজন পবিত্র ঈদুল ফিতরের মত ঈদুল আজহায় ধাপে ধাপে বাড়ী যাওয়ার সুযোগ পাবে। ঈদযাত্রা স্বস্থিদায়ক হবে। সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রানহানি কমে আসবে ও মানুষের যাতায়াতের ভোগান্তি কমবে, পরিবহন সংকটকে পুঁিজ করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধ হবে। পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে ৪ দিন ছুটি ছিল বলেই মানুষজন ধাপে ধাপে বাড়ী যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে ঈদযাত্রা স্বস্থিদায়ক হয়েছিল।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন, বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির প্রান্তিক জনশক্তি উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক অপর্ণা রায় দাশ, সংগঠনের অর্থ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রাসেল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ রফিকা আফরোজ প্রমুখ।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সুপারিশসমূহ-
১. ঈদের পরের ছুটি কমিয়ে ঈদের আগে ৩ ও ৪ জুন ২ দিনের ছুটি বাড়ানো।
২. ঈদযাত্রায় ফিটনেস বিহীন লক্কড়-ঝক্কড় বাস ও লঞ্চ চলাচল বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৩. পরিবহন সংকটকে পুঁিজ করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৪. জাতীয় মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত রিক্সা, সিএনজি চালিত অটোরিক্সা, নসিমন-করিমন চলাচল কঠোরভাবে বন্ধ করা।
৫. কালবৈশাখী মৌসুম হওয়ায় নৌ-পথে ফিটনেস বিহীন লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ করা।
৬. সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করা।
৭. জাতীয় মহাসড়কের টোল পয়েন্ট গুলোতে যানজট বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া।
৮. সড়কে চলাচলকারী পশুবাহী ট্রাক থামিয়ে যানজট তৈরী ও সড়কের পাশে পশুরহাট থেকে সৃষ্ট যানজট বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ।
৯. ঈদের আগে প্রতিটি জাতীয় মহাসড়ক সড়ক নিরাপত্তা অডিট নিশ্চিত করা।
১০. সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে পুলিশ ও অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সক্রিয় রাখা।
১১. সড়কে ডাকাতি, পথে পথে ছিনতাই বন্ধে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো জরুরী।