সুযোগ পেলে সকল ধর্মের মানুষের ন্যায্য সব দাবি পূরণ করবে জামায়াতে ইসলামী – ডা. শফিকুর রহমন
নিজস্ব প্রতিবেদক
সুযোগ পেলে সকল ধর্মের মানুষের ন্যায্য সব দাবি পূরণ করবে জামায়াতে ইসলামী ঘোষণা দিয়ে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান বলেন, সেই সুযোগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গিয়ে হোক বা বিরোধী দলে থেকে হোক। জনগণের জন্য কাজ করতে হলে ক্ষমতার চেয়ে স্বদিচ্ছার প্রয়োজন বেশি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, অতিতে যারা সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের ৫ দফা দাবি বাস্তবায়নের নির্বাচনী ইশতেহার দিয়ে সনাতনী ভোট নিয়েছে, কিন্তু নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন করেনি, তারা সনাতনীদের ধোঁকা দিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী ধোঁকা দেওয়ার রাজনীতি করে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের ৮ দফা দাবি উত্থাপিত রয়েছে। কেবল এই ৮ দফা দাবিই নয়, যৌক্তিক ও ন্যায্য সব দাবি পূরণে জামায়াতে ইসলামী কাজ করবে।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) রাতে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সাথে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আয়োজিত প্রীতি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের সব ধর্মের মানুষ মিলে একটি ফুলের বাগান। এই ফুলের বাগানে আর কোন হুতুম পেঁচা ঢুকতে দেওয়া হবে না। সম্প্রাদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে এই জাতিকে বিশ্বের কাছে অনুসরণীয় জাতি হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়ে আমীরে জামায়াত বলেন, বিশ্বের সব কিছু অনুসরণ নয় আমাদেরকেও বিশ্ব অনুসরণ করবে আমরা এমন কাজ করতে পারি। সেজন্য তিনি সব ধর্মের মানুষের কাছে সহযোগিতা কামনা করেন। যাদের কাজের সাথে কথা মিল নেই তাদের সমর্থন না দিয়ে যাদের কথা ও কাজের মিল রয়েছে তাদেরকে সমর্থন দিতে তিনি উপস্থিত বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, যদি কথা ও কাজে জামায়াতে ইসলামীর মিল দেখেন তবেই জামায়াতে ইসলামীকে সমর্থন দিবেন।
জামায়াতে ইসলামীর ব্যানারে নির্বাচনের সুযোগ রয়েছে সব ধর্মের মানুষের উল্লেখ করে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের জন্য সংসদের আসনের একটি অংশ নির্ধারিত করে যোগ্যদের নির্বাচনের সুযোগ দিলে অবশ্যই যোগ্যরা সংসদে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। এক্ষেত্রে সংখ্যা হবে আনলিমিটেড। যিনিই যোগ্য হবেন তিনিই প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাবে। জামায়াতে ইসলামীর ব্যানারে শুধু মুসলিমরা নির্বাচন করবে তা নয়, জামায়াতে ইসলামীর ব্যানারে সমাজের যেকোন সৎ, যোগ্য, আদর্শবান, চরিত্রবান, দেশপ্রেমিক নাগরিক নির্বাচন করতে পারবে। জামায়াতে ইসলামী বিশ্বাস করে, রাষ্ট্র পরিচালনের জন্য সৎ, দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্বের প্রয়োজন। ৫ আগস্টের বিজয়ে অর্জিত নতুন বাংলাদেশে সুষ্ঠু সমাজ গঠনে তিনি সকল ধর্মবর্ণ, জাতি-গোষ্ঠীর সমন্বিত সহযোগিতার আহ্বান জানান।
অমুসলিমদের উপর জামায়াতে ইসলামী কোন জুলুম করেনি ভিন্ন ধর্মাবলম্বী নেতৃবৃন্দের স্বীকারোক্তির জবাবে বলেন, তবে কারা অমুলিমদের উপর জুলুম করেছে, কারা অমুসলিমদের সম্পদ দখল করেছে তাদের মুখোশ উম্মোচন করতে হবে। যারা হিন্দুদের পক্ষের লোক দাবি করে হিন্দুদের সম্পদ দখল করেছে, হিন্দুদের উপর জুলুম করেছে তাদের রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশ করতে তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান।
আমীরে জামায়াত বলেন, মসজিদ যদি পাহারা দিতে না হয়; তাহলে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয় কেন পাহারা দিতে হবে?- সব ধর্মের মানুষের সমান স্বাধীনতা তারাই দেয়নি যারা মূলত ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করেছে এবং করতে চায়। জামায়াতে ইসলামী বিশ্বাস করে, রাষ্ট্রের কাছে সকল মানুষ, সকল ধর্ম সমান। ইসলামে স্পষ্ট ঘোষণা রয়েছে, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করা যাবে না। যে যার ধর্ম স্বাধীনভাবে পালনের নিশ্চিয়তা কেবলমাত্র ইসলাম দিয়েছে। তাই ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে সমাজের সকল ধর্মের মানুষ নিরাপদ ও স্বাধীনতা লাভ করবে। প্রত্যেক মানুষ গর্বের সাথে স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারবে।
রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকদের সমাজের চতুর্দিক থেকে দেখতে হবে উল্লেখ করে আমীরে জামায়াত বলেন, অনেক রাজনীতিবিদ শুধু একদিক থেকে দেখেন। সেটা হচ্ছে নিজের দিক থেকে দেখা। এজন্য নিজ দলের কর্মীরা অপরাধ করলেও তারা সেটি দেখে না। অন্য তিন দিক থেকে না দেখার কারণেই পারিযে যেতে হয়, হারিয়ে যেতে হয়। এবং আগামীতেও পালিয়ে যেতে হতে পারে। তাই নিজের দিক থেকে না দেখে চতুরদিক থেকে দেখতে হবে। তবে সমাজের কল্যাণ হবে। জামায়াতে ইসলামী সামনের দিক থেকে সমালোচনার রাজনীতি সমর্থন করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক ভুল থাকলে সেটি সামনে এসে কেউ বললে আমরা সাধুবাদ জানাবো এবং সংশোধনের চেষ্টা করবো। পিছন থেকে সমালোচনায় সমাজ উপকৃত হয় না। তাই তিনি রাজনৈতিক হিংসা, প্রতিহিংসা ভুলে রাজনৈতিক শিষ্টাচার বজায় রেখে জনগণের কল্যাণে রাজনীতি করার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রীতি সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দলের সহকারী সেক্রেটারী জননেতা মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ৫ আগস্ট থেকে ৮ আগস্ট সরকার বিহীন রাষ্ট্রে পরাজিত শক্তি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের উপর হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করার যেই ষড়যন্ত্র করেছে জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমানের বিচক্ষণতায় সেই ষড়যন্ত্র সফল হয়নি। আমীরে জামায়াতের নির্দেশে দলের নেতাকর্মীরা সারাদেশে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তায় দিন-রাত নিয়োজিত ছিল। এতে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের স্বস্তি ও শান্তি ফিরে এসেছে।
জামায়াতে ইসলামী শান্তির সমাজ গঠনে কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম সেই শান্তি সমাজে ছড়িয়ে দিতে হলে ইসলামী সমাজ বিনির্মাণ করতে হবে। হিন্দুুদের বন্ধু সেজে যারা হিন্দুদের সম্পদ দখল করেছে, হিন্দুদের উপর জুলুম করেছে তারা এসব অপবাদ ইসলামী দলগুলোর উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন সাক্ষ্য দিচ্ছে, কোন ইসলামী দল তাদের উপর জুলুম করেনি। বরং জামায়াতে ইসলামী তাদের সম্পদ রক্ষায় ভূমিকা রেখেছে।
আয়োজিত প্রীতি সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া বলেন, বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর আয়োজিত এই প্রীতি সমাবেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই আয়োজন শুধু প্রীতি নয়, সম্প্রীতির বন্ধন। জামায়াতে ইসলামী তাদের নেতৃত্ব নিরবে-নির্বিঘ্নে জনগণের দোঁড় গোড়ে পৌঁছে দিয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে মানবিক গুনের চিত্র ফুটে ওঠে।
তিনি বলেন, ডা. শফিকুর রহমান একজন মানবিক নেতা হিসেবে সমাজে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি সব ধর্মের মানুষের কাছে বিশ্বাস ও আস্থার প্রতীক হিসেবে মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশ নিয়ে কেউ যাতে অপপ্রচার চালাতে না পারে সেজন্য তিনি, সকল মানুষকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারী ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিআইবি) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত প্রীতি সমাবেশে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, অধিকারের কথা সংবিধানে উল্লেখ থাকলেও স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়নি। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে আমরা যেই স্বপ্ন দেখেছি বৈষম্যের অবসান ঘটবে বিগত ৮ মাসে সেই স্বপ্নের আশার আলো বেশি দূর দেখা যায়নি। তবে জামায়াতে ইসলামী আমাদেরকে অভয় দিয়েছে, অনুপ্রাণিত করেছে। যখন সরকার বিহীন রাষ্ট্রে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ছিলাম তখন জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান সহ দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে আমাদেরকে সাহস যুগিয়েছেন। আমাদের পাশে ছায়ার মত দাঁড়িয়েছেন। যার জন্য জামায়াতে ইসলামীর প্রতি আমাদের আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপিত হয়েছে।
বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সভাপতি দ্বীন বন্ধু রায় বলেন, জামায়াতে ইসলামী বা ইসলামী কোন দল হিন্দুদের বাড়ি-ঘর দখল করেনি। বরং যারা হিন্দুদের পক্ষের লোক দাবি করেছে তারাই হিন্দুদের সম্পদ দখল করে বসে আছে। তাদের কাছেই হিন্দুরা নিরাপত্তাহীন ছিল।
বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব এডভোকেট গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, জামায়াতে ইসলামী প্রচলিত রাজনৈতিক দলের বাইরে ভিন্ন রাজনৈতিক দল। তারা মূলত জনগণের কল্যাণে সমাজের প্রতিটি স্তরে কাজ করছে। পঞ্চগড়ে নৌকা ডুবে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন নিহত হওয়ার ঘটনায় হিন্দু নেতৃবৃন্দ হিন্দুদের জন্য যেটা করতে পারেনি, জামায়াতে ইসলামী সেটি করতে পেরেছে। তারা আমাদের আগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে। আর্থিক ও মানবিক সহযোগিতা করেছে। এক বাক্যে বলা যায়, প্রকৃত অর্থে জনগণের কল্যাণে কাজ করছে জামায়াতে ইসলামী। অথচ ৯৫ শতাংশ মুসলিমের রাষ্ট্রে জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্র কর্তৃক সবচেয়ে বেশি জুলুমের শিকার হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর দুজন মন্ত্রী ছিলেন যাদের বিরুদ্ধে তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এমনকি চরম শত্রুরাও বলতে পারেনি তারা এক পয়সা দুর্নীতি করেছে। জামায়াতে ইসলামীতে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের কোন স্থান নেই এটা প্রমানিত। সেজন্য জামায়াতে ইসলামী ব্যতিত অন্য কোন রাজনৈতিক দল দুর্নীতি সন্ত্রাস মুক্ত দেশ গঠনের কথা বলতে পারে না। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ হিন্দুদের জিম্মি করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেই জিম্মি থেকে ২০২৪ সালে হিন্দুরা মুক্তি পেয়েছে। তিনি, আগামীতে সংসদে সকল ধর্মের প্রতিনিধিত্ব রাখার দাবি জানান।
ইমান্যুয়েল ব্যাপ্টিষ্ট চার্জ পাস্তর তনান রায় বলেন, ইসলাম ধর্মে বলা হয়েছে, যেই ব্যক্তি কোন ভিন্ন ধর্মের লোককে হত্যা করবে সে জান্নাতের সুগন্ধও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধ ৪০ বছরের দূরত্ব পর্যন্ত ছড়ায়। তাই বলা যায়, ইসলামে সন্ত্রাসের স্থান নাই।
তিনি আরো বলেন, ইসলামী শিক্ষায় জামায়াতে ইসলামী নেতৃত্ব দিচ্ছে। যার কারণে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের দ্বারা কোন অমুসলিম নির্যাতিত হয়নি।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির সাধারন সম্পাদক সন্তোষ শর্মা বলেন, জামায়াতে ইসলামীর আমীরের ভূমিকায় আমরা সাহস পেয়েছি। ০৫ আগস্ট থেকে ০৮ আগস্ট বাংলাদেশে কোন সরকার ছিল না। সে সময়ে আমরা চরম নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ছিলাম। কারণ পরাজিত শক্তি সব সময় মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে হিন্দুদের টার্গেট করে। তবে সেই নিরাপত্তা ঝুঁকি কাটিয়ে দিয়েছে জামায়াতে ইসলামীর আমীর। তিনি হিন্দুদের বাড়ি-ঘর পাহারা দিতে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিলে সারাদেশে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা হিন্দুদের পাহারা দিয়েছে। স্বাধীনতার পরবর্তী প্রতি বছর দূর্গা পূজায় কোন না কোন দুর্ঘটনা ঘটলেও ২০২৪ সালের দূর্গা পূজা ছিল সবচেয়ে স্বস্তির ও শান্তির। এজন্য জামায়াতে ইসলামী মূখ্য ভূমিকা পালন করেছে।
তিনি আরো বলেন, সনাতনী ধর্মের মানুষের ৫ দফা দাবি ছিল। ঐ দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়ে অতিতে সনাতনীদের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। নির্বাচনের আগে সনাতনীদের দাবি গুলো মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিলেও ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকেও একটি দাবিও পূরণ করা হয়নি। ০৫ আগস্ট পরবর্তী নতুন বাংলাদেশে সনাতনীদের সেই ৫ দফা এখন ৮ দফায় রূপ নিয়েছে। ৮ দফা দাবি পূরণে তিনি জামায়াতে ইসলামীর সহযোগিতা কামনা করে বলেন, আমরা বিশ্বাস করি জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে সনাতনীরা সকল জুলুমের ন্যায় বিচার পাবে।
বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সহকারী সেক্রেটারী প্রিন্সিপাল অনুপম বড়ুয়া বলেন, বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগ সময়োপযোগী। ধর্ম যার যার ভিন্ন হলেও আমরা মানুষ হিসেবে এক এবং অভিন্ন। সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ বাংলাদেশ। আমাদেরকে বিভাজন করতে যারা কাজ করে তাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে। এরাই মূলত দেশবিরোধী অপশক্তি।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সরকারি সহায়তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদ সমাজ কল্যাণ মন্ত্রীর হওয়ার পর এই সংঘের সহায়তা তিনি পুনরায় চালু করেন। তিনি তার সেই প্রচেষ্টায় প্রমান করেছেন, রাষ্ট্রের কাছে সকল ধর্ম সমান।
সিদ্ধেশরী সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি সাবেক ডিআইজি নির্বাক চন্দ্র মাঝি বলেন, জামায়াতে ইসলামীর আমীরের ঘোষণায় আমরা নির্ভয়ে বসবাস করতে পারছি। তিনি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের আস্থার প্রতিক হয়েছেন। নিরবে-নির্বিঘ্নে জামায়াতে ইসলামী মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ক্ষমতায় না গিয়েও জামায়াতে ইসলামী সমাজের সব ধর্মবর্ণ, জাতি-গোষ্ঠীর জন্য সমান ভাবে কাজ করছে। একজন সাবেক ডিআইজি হিসেবে সাক্ষ্য দিয়ে বলতে পারি, জামায়াতে ইসলামী সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, দুর্নীতি করে না। জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল শহীদ কামরুজ্জামানের নির্বাচনী এলাকায় এসপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে রাজসাক্ষী হতে পেরেছি, জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্ব সৎ, যোগ্য ও দক্ষ।
মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুভাশীষ বিশ্বাস বলেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী হিন্দু ধর্মের লোকজন সবচেয়ে বেশি আতঙ্কিত ছিল। কিন্তু আমীরে জামায়াতের ঘোষণার পর স্বস্তি ও শান্তি ফিরে আসে। ফলে নির্বিঘ্নে হিন্দু সম্প্রদায় স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন করতে পারছে।
লিটন বড়ুয়া বলেন, ৪০ বছর আগে ইসলামি ছাত্র শিবির চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যেই সম্প্রীতির বন্ধন সৃষ্টি করেছে তার চিরস্মরণীয়। ইসলামি ছাত্র শিবিরের আদর্শ একটি সুন্দর সমাজ গঠনে যোগ্য নেতৃত্ব তৈরির আদর্শ। জামায়াতে ইসলামী সেই যোগ্য নেতৃত্বের দৃষ্টান্ত।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারী ড. আব্দুল মান্নান বলেন, কুরআনে বলা হয়েছে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করা যাবে না। জোরপূর্বক কারো উপর কিছু চাপিয়ে দেওয়ার অধিকার কোন মানুষের নাই। ইসলাম সম্পর্কে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় মিথ্যা ও অপপ্রচার চালানো হয়। যা ইসলামী সমাজে বাস্তবতার সাথে কোন মিল নেই। ইসলাম শান্তির ধর্ম, ইসলামের ছায়াতলে সকল মানুষ নিরাপদ ও স্বাধীন। বাংলাদেশে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উপাসনালয় পাহারা দিতে হবে না। নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালনের নিশ্চিতা রাষ্ট্র কর্তৃক প্রদান করা হবে।
সভাপতির বক্তব্যে জননেতা মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, জামায়াতে ইসলামীর আমীরের ঘোষণায় ভিন্ন ধর্মাবলম্বী নিরাপত্তায় দলের নেতাকর্মীরা নিয়োজিত ছিল। আমীরে জামায়াতের সেই ঘোষণা, দেশের আলেম সমাজ ঐক্যবদ্ধভাবে পালন করেছে। জামায়াতে ইসলামী স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছে, কেউ সংখ্যালঘু নয় সকলেই রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে সমান মর্যাদার অধিকারী। ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যালঘু বানিয়ে নাগরিক অধিকার বিনষ্টকারীরাই মূলত রাজনৈতিক ফায়দা লুটে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। ইসলামের ছায়াতলে সকল মানুষ নিরাপদ এবং নির্বিঘেœ স্বাধীনভাবে ধর্ম পালনের সুযোগ রয়েছে। ইসলাম জোরপূর্বক কারো উপর কিছু চাপিয়ে দেয় না। বরং এবিষয়ে ইসলামে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। তিনি নতুন বাংলাদেশ গড়তে দলমত, ধর্মবর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠিত প্রীতি সমাবেশে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারী যথাক্রমে মুহাম্মদ দেলাওয়ার হোসেন, মোহাম্মদ কামাল হোসেন, শামছুর রহমান, মহানগরী দক্ষিণের প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সহকারী সম্পাদক আবদুস সাত্তার সুমন সহ মহানগরী দক্ষিণের শূরা ও কর্মপরিষদের নেতৃবৃন্দ এবং সর্ব ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।