রানা ইসলাম বদরগঞ্জ রংপুর : বদরগঞ্জে বিএনপির নেতা লাভলু মিয়া হত্যা মামলার আসামিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় উদ্বেগ উৎকন্ঠা নিহতের পরিবার। হত্যার ১৫ দিন পেরিয়ে গেলেও মূল আসামীরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে।আর নিহত বিএনপি নেতা লাভলুর পরিবার চরম বিচারহীনতায় আশংকার মধ্যে দিন পার করছেন।তাদের দাবি পুলিশ শতভাগ চেষ্টা করছেন না আসামীদের গ্রেফতারের।
তবে নিহত লাভলু মিয়ার ছেলে ও হত্যা মামলার বাদী রায়হান কবীরের অভিযোগ, আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের কোনো ভূমিকা নেই। আসামিপক্ষের টাকা ও তদবিরে পুলিশ আসামিদের ধরতে পদক্ষেপ নিচ্ছে না। নির্দলীয় সরকারের অধীনে পুলিশের এমন ভূমিকায় তাঁরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।
বদরগঞ্জ পৌর শহরে একটি টিনের দোকানকে কেন্দ্র করে গত ৫ এপ্রিল দুপুরে বদরগঞ্জ পৌরশহরে হাসপাতাল সড়কে বাচ্চা মিয়ার গলির সামনে সংঘর্ষে মধুপুর ইউনিয়ন বিএনপির সমাজকল্যান সম্পাদক লাভলু মিয়া (৫২) নিহত হন। ঘটনার পর তাঁর ছেলে রায়হান কবীর বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা করেন। ঘটনার ১৫ দিনেও মামলার প্রধান আসামি স্থানীয় কালুপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শহিদুল হক (মানিক), তাঁর ছেলে তানভীর আহম্মেদ ও স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি সারোয়ার জাহানকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
নিহতের মেয়ে লাবনী আক্তার বলেন, ‘আমার বাবা বিএনপি নিবেদিত কর্মী ছিলেন। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম করে চারটি মামলায় তিন মাস জেল খেটেছেন। এখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় নেই, শেখ হাসিনাও পালিয়ে গেছেন। এখন মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সময়ে বাবাকে কুপিয়ে হত্যা করা হলো। হত্যার ১৫ দিন পেরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বিচার পাচ্ছি না। পুলিশ আসামিদের টাকার কাছে বিক্রি হওয়ায় তাঁদের ধরছে না। বরং আসামিরাই এখন মামলা তুলে নিতে আমাদের হুমকি দিচ্ছে।’
মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে ১০ দিন ধরে বদরগঞ্জ পৌর শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও পথসভা করছেন উপজেলা বিএনপির এক অংশের নেতা-কর্মীরা। আন্দোলনকারীদের নেতা উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক হুমায়ুন কবীর প্রথম আলোকে বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তার করা না হলে তাঁরা ২৩ এপ্রিল বদরগঞ্জে হরতাল পালন করবেন।
আন্দোলনকারীদের আরেক নেতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন অভিযোগ করে বলেন, লাভলু হত্যা মামলার প্রধান আসামি ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল হক, তাঁর ছেলে তমাল ও ব্যবসায়ী নেতা সারোয়ার জাহান উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য পরিতোষ চক্রবর্তীর অনুসারী। তাঁর (পরিতোষের) তদবিরের কারণে ও আসামিপক্ষের কাছে টাকা নেওয়ায় থানা-পুলিশ তাঁদের ধরছে না।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে পরিতোষ চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, ‘হত্যা মামলার আসামিদের আমার প্রশ্রয় দেওয়াযর প্রশ্নই আসে না।আমি ও চাই এ হত্যাকান্ডের সুস্থ তদন্ত করে প্রকৃত আসামিদের ধরার জন্য।
এবিষয়ে সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী সরকার বলেন, আওয়ামীলীগের দোসর এই কালা মানিক একের পর এক হত্যাকান্ডে চালিয়ে যাচ্ছেন।কিন্তু পুলিশ তার কিছুই করতে পারছেন।বিএনপির সাবেক এই নেতা আরো বলেন,লাভলু হত্যাকারীদের গ্রেফতার না করলে বদরগঞ্জসহ বৃহত্তর রংপুর জেলায় কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।
রংপুরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ মোহাম্মদ বলেন, আমি নিজে আসামিদের গ্রেফতার জন্য বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি।পাশাপাশি আমাদের অন্য বাহিনীরা কাজ করছেন।সংঘর্ষের আগে ওসি ঢিলেমি সম্পর্কে বলেন,ওনি দু’পক্ষকে চেষ্টা করছেন আন্তরিক সহিত।
বদরগঞ্জ থানার ওসি এ কে এম আতিকুর রহমান বলেন, হত্যা মামলায় এজাহারনামীয় ১২ আসামির মধ্যে এক আসামিসহ সন্দেহভাজন ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আসামিপক্ষের টাকার কাছে পুলিশের বিক্রি হওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন।