ক্রাইম রিপোর্টার সৈয়দ এম আলিফ।
মুলাদি উপজেলায় কাজীরচর ইউনিয়ন পরিষদে বিএনপির ইউনিয়ন কর্মী সমাবেশ থেকে ফেরার পথে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা আব্বাস হাওলাদার এবং তার ক্যাডার বাহিনী। এতে গুরুতর আহত হয়েছে কাজীরচর ইউনিয়ন বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আব্দুল মালেক হাওলাদারের ছেলে শাহরুল রমজান। শুক্রবার বিকেলে মীরগঞ্জ ফেরিঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহত শাহারুল রমজান কে স্থানীয়রা উদ্ধার করে মুলাদি ফেয়ার ক্লিনিক হাসপাতালে ভর্তি করেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে মুলাদী থানা পুলিশ। এ ঘটনায় মুলাদী থানায় একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
জানা যায়, শুক্রবার বিকালে কাজিরচর ইউনিয়ন বিএনপির কর্মী সমাবেশ যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে মুলাদী উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য ও কাজিরচর ইউনিয়ন বিএনপির সেক্রেটারি পদপ্রার্থী আব্দুল মালেক হাওলাদার তার লোকজন নিয়ে রওয়ানা হলে মীরগঞ্জ ফেরিঘাট এলাকায় বাধা প্রদান করে এবং প্রোগামে গেলে পা কেটে ফেলার হুমকি দেন আওয়ামী লীগ নেতা আব্বাস। সন্ধ্যার পরে প্রোগ্রাম থেকে ফেরার পথে ফেরিঘাট এলাকায় হামলার শিকার হয় ওই বিএনপি নেতা।
এসময় আব্বাস বাহিনীর হামলায় গুরুত্বর আহত হয় বিএনপি নেতার ছেলে শাহারুল রমজান।
হামলার শিকার বিএনপি নেতা আব্দুল মালেক জানায়, আব্বাস হাওলাদার সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান হক কামাল এর একান্ত সচিব হারুন -অর-রশিদ বিশ্বাস এবং তার ভাই সাবেক কাজিরচর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এর প্রভাবে ফেরিঘাট এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, মুলাদী উপজেলার প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ হারুন বিশ্বাস এবং মন্টু বিশ্বাস এর আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থেকে আব্বাস গত ১৫ বছর কাজিরচর এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। চাদাবাজী, ধর্ষন, টেন্ডারবাজি,জমি দখল সহ বিভিন্ন অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। কিন্তু তিনি প্রতাপশালী নেতার ছত্র-ছায়ায় থাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তার অপরাধের লাগাম টানতে পারছিল না।
জানা গেছে, আব্বাস তার ক্যাডার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রশাসন এর কাছে বারবার অভিযোগ করেও কোনা সুফল পাওয়া যায়নি। বরং যারা তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন, তাদের প্রত্যেককেই আওয়ামী লীগের শাসনামলে হয়রানি করা হয়।
সূত্র জানায়, কাজিরচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা আব্বাস আওয়ামী লীগের আমলে মীরগঞ্জ ফেরিঘাট ইজারা নিয়েও সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার চালিয়েছেন। নিজেদের ইচ্ছেমত অতিরিক্ত অর্থ আদায় করতে গিয়ে বহু নামি-দামি ব্যক্তিকে লাঞ্ছিত করেন। মিরগঞ্জ ফেরিঘাট কে ব্যবহার করে সাধারন মানুষকে লাঞ্চিত করা এদের নিত্যকার ঘটনা যা বিভিন্ন পত্রিকা, টিভি নিউজ এবং গণমাধ্যমে বহুবার ভাইরাল হয়েছে।
এসব ঘটনায় পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চাপের মুখে তখন কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও রাজনৈতিক ক্ষমতার কারণে তিনি ছিলেন ধরাছোয়ার বাইরে।
স্থানীয় বিএনপি নেতারা জানান, আওয়ামী লীগের শাসনামলে উপজেলার কিছু প্রভাবশালী নেতার প্রভাবে আব্বাস হাওলাদার ৫ ভাই সহ ১০/১৫ জনের সন্ত্রাসী বাহিনী গোটা ইউনিয়নে ত্রাস করে বেড়িয়েছেন। দুর্দান্ত প্রতাপের সাথে এলাকায় কোপাকুপি, খুন-জখম করাসহ সাধারণ অসংখ্য মানুষকে হয়রানি করেছেন।
মুলাদীর সুশীল মহল বলছে, উপজেলা প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার প্রভাবে আব্বাস এবং তার সন্ত্রাসী গ্যাং বিগত ১৫/১৬ বছর ইউনিয়নে দাপিয়ে বেড়িয়েছে। খুন-খারাপিসহ টেন্ডারবাজি করে গত ১৫ বছরে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন। গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরও অদৃশ্য কারনে আলোচিত আব্বাস সন্ত্রাস গং বহালতবিয়তে ই আছে।
রহস্যজনক কারণে তাকে এখন পর্যন্ত কোনো মামলায় পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এই শীর্ষস্থানীয় সন্ত্রাসীকে অচীরেই আইনের আওতায় নিয়ে আসার জোর দাবি জানিয়েছে মুলাদীতে নির্যাতনের শিকার ব্যক্তি এবং তাদের স্বজনেরা।
হামলার শিকার বিএনপি নেতা আব্দুল মালেক জানায়, আব্বাস হাওলাদার একজন আওয়ামী লীগ নেতা। সে বিগত দিনে ফেরিঘাট এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। এখনও বীরদর্পে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। আজ বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর হামলা করে। এতে আমার ছেলে গুরুতর আহত হয়েছে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আমি একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছি।