নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেছেন, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজদের কাছে জামায়াতে ইসলামী দেশ ছেড়ে দিবে না। জামায়াতে ইসলামী জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ, খুনি, ধর্ষক, লুটেরা ও নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের প্রতিহত করবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ঘটিয়েছে। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর মানুষ নিশ্চিত হয়েছে, সন্ত্রাসীদের হাতে আর কাউকে জীবন দিতে হবে না, কাউকে চাঁদা দিতে হবে না। কিন্তু দেখা গেছে আওয়ামী লীগের মতই আরেকদল সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি শুরু করেছে। নিজেরাই নিজেদের দলীয় নেতাকর্মীদের নৃশংসভাবে খুন করছে। তারা প্রতিদিন নির্বাচন চাইলেও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে কথা বলছেন না। কারণ সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, ধর্ষক, খুনি তাদেরই পালিত।
মিটফোর্ডে বর্বরোচিত হত্যাকান্ডসহ সারাদেশে খুন, ধর্ষন, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের প্রতিবাদে ও দোষীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের দাবিতে শনিবার (১২ জুলাই) দুপুরে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেইটে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের বিক্ষোভ মিছিল পূর্বক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রফিকুল ইসলাম খান বলেন, জাতির সাথে তামাশা করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ক্ষমতায় বসানো হয়নি। সরকারকে মনে রাখতে হবে তারা ক্ষমতায় বসেনি, তাদেরকে জনগণ ক্ষমতায় বসিয়েছে। জনগণের জানমাল, ইজ্জত রক্ষা করতে না পারলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, থানা থেকে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নৈতিক দায়িত্ব ছিল পদত্যাগ করা। কিন্তু তিনি সেটি করেননি এমনকি আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি উন্নতিও করতে পারেননি।
সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ কোন দলের হতে পারে না মন্তব্য করে রফিকুল ইসলাম খান বলেন, সন্ত্রাসী কত বড় নেতা, চাঁদাবাজ কত বড় নেতা, কোন দলের নেতা তা না দেখে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, ধর্ষক, খুনিদের গ্রেপ্তার করতে হবে।
কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, মিটফোর্ড – খুলনা – চাঁদপুরের ঘটনা ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরে আওয়ামী লীগের ‘লগি-বইঠা’ হত্যাকান্ডকেও হার মানিয়েছে। ছাত্র-জনতার অর্জিত নতুন বাংলাদেশে সন্ত্রাসী- চাঁদাবাজ থাকতে পারবে না। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, খুনি, ধর্ষকদের এখনই প্রতিহত করতে হবে।
কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, নতুন বাংলাদেশে একটি দল নির্বাচন নির্বাচন তসবিহ পাঠ করে-করে সারাদেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করছে। ৯ তারিখে তাদের দলের নেতা হত্যার শিকার হলেও ৪দিন পরে কেন তারা সংবাদ সম্মেলন করে হত্যার বিচার দাবি করে! পৃথিবীর ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা যেখানে সারা বিশ্বে মানুষ সরকারের পতন চায়, সেখানে বাংলাদেশে মানুষ একটা দল ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই তাদের পতন চায়। তাদের হাত থেকে মুক্তি চায়! একটি রাজনৈতিক দলের জন্য এটি কতটা নিলজ্জতা সেটি বলে শেষ করা যায় না।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি দেলাওয়ার হোসেন এবং মোহাম্মদ কামাল হোসেন। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি ড. আব্দুল মান্নান ও শামছুর রহমান। এছাড়াও মহানগরীর কর্মপরিষদ ও শুরা সদস্যবৃন্দ সহ বিভিন্ন থানা আমীর -সেক্রেটারি ও দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, একটি দল ৫ আগস্ট পরবর্তী দেশ গড়ার পরিবর্তে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী, ছিনতাই, ধর্ষণ, নৈরাজ্য সৃষ্টি করে আসছে। দ্রুত নির্বাচন না দিলে দেশের অবস্থা আরো খারাপ হবে বলে তারা ঘোষণা দিয়ে এসব সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ধর্ষণ, খুনের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে আসছে। তারা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে, চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে, ধর্ষকের বিরুদ্ধে, খুনির বিরুদ্ধে কথা বলছে না; বরং পক্ষ নিচ্ছে।
নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ প্রশয় দেওয়া পরিহার করতে তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এসব সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজদের দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া যাবে না, ক্ষমতায় যাওয়া যাবে না। জনগণ আগামীতে কোন সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ দলের হাতে দেশ তুলে দিবে না। তিনি সরকারকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতি করতে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, মাদক, ধর্ষক, খুনিদের বিরুদ্বে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করার আহ্বান জানান।
সমাবেশ শেষে, মিটফোর্ডে বর্বরোচিত হত্যাকান্ডসহ সারাদেশে খুন, ধর্ষন, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের প্রতিবাদে ও দোষীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের দাবিতে এক বিক্ষোভ মিছিল বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেইট থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাব হয়ে শাহবাগ গিয়ে শেষ হয়।