মাহফুজ রাজা, স্টাফ রিপোর্টার : প্রতিটি মুখেই হাসি আর মনে অপার আনন্দ। কারো হাতে নতুন স্কুল ব্যাগ আবার কারও হাতে দেখা যাচ্ছে নতুন টিফিন বাক্স। দেখে মনে হচ্ছে আজ থেকে তারা যেন নতুন উদ্যোমে আবার লেখাপড়া শুরু করবেন! এমনই দৃশ্যের দেখা মিলেছে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার চরাঞ্চলের ৫ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
হোসেনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাজী নাহিদ ইভার উদ্যোগে গত সোমবার দুপুরে চরাঞ্চলের ৫ শতাধিক প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন স্কুল ব্যাগ ও টিফিন বাক্স তুলে দেওয়া হয়। এসব পেয়ে শিশুরা খুবই খুশি হয় এবং আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ে। তাদের অনেকেই এমন ব্যাগ বা টিফিন বক্স আগে কখনও পায়নি।
জানা গেছে, এ উপজেলার চরাঞ্চালের গ্রামগুলো প্রাথমিক শিক্ষায় পিছিয়ে আছে। বেশীরভাগ পরিবারই তাদের সন্তানের শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দেন না। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই মুলত একটি শিশু তার শিক্ষা জীবন শুরু করে।
তাই পিছিয়ে পড়া এসব শিশুদের বিদ্যালয় মুখী করতে এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। উপজেলার চরকাটিহারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরহাজীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ চরাঞ্চলের ৫ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩৫০ জন শিক্ষার্থীদের টিফিন বাক্স ও ১৬৫ জন শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন স্কুল ব্যাগ তুলে দেওয়া হয়েছে।
নতুন স্কুল ব্যাগ পেয়ে আনন্দে আত্মহারা পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র রাফি বলেন, আমার পুরনো ব্যাগ ছিঁড়ে গিয়েছিল। আজ নতুন ব্যাগ পেয়েছি। খুব ভালো লাগছে।
এদিকে, অভিভাবকদের প্রতিক্রিয়া ছিল ইতিবাচক। তারা জানান, গ্রামে অনেক পরিবারই দরিদ্র। স্কুল ব্যাগ বা টিফিন বক্স কেনা অনেকের পক্ষে সম্ভব হয় না। ইউএনও’র এই উদ্যোগে তাদের সন্তানরা নতুন উদ্যমে স্কুলে যাচ্ছে। উপস্থিতিও বেড়েছে।
চরকাটিহারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আরব আলী বলেন, এই সহায়তা শিক্ষার্থীদের মধ্যে আনন্দের সৃষ্টি করেছে। আগে কেউ কেউ ছেঁড়া ব্যাগ নিয়ে আসত, কেউবা টিফিন আনত না। এখন তারা গুছিয়ে স্কুলে আসছে।
প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. এমদাদুল হক বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের মাঝে এসব উপহার বিতরণ শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করে তুলবে। এতে এ উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা আরও এগিয়ে যাবে।
ইউএনও কাজী নাহিদ ইভা বলেন, চরের শিশুদের অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে দিয়ে স্কুলে আসতে হয়। তাদের উৎসাহ দিতে এবং পড়ালেখায় আগ্রহ বাড়াতে এই সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আমরা চাই, কেউ যেন শুধু অভাবে স্কুলছুট না হয়।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে শিশুদের স্কুল জীবন শুরু হয়। প্রাথমিক শিক্ষাকে এগিয়ে নিতেই আমাদের এ ক্ষুদ্র প্রয়াস। শিক্ষা উপকরণ বিতরণের এই উদ্যোগ একটি চলমান প্রক্রিয়ার অংশ এবং ভবিষ্যতে আরও বিস্তৃত আকারে এটি বাস্তবায়ন করা হবে।