ঢাকা , বুধবার, ০৪ জুন ২০২৫, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
বেলকুচিতে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধী কিশোরীকে ধর্ষণ ও ভয় দেখিয়ে গর্ভপাতের অভিযোগ  ০২ কেজি গাঁজাসহ ০১ জন মাদক ব্যবসায়ীকে র‌্যাব কর্তৃক গ্রেফতার। মাদক আইনের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পরোয়ানাভুক্ত আসামী জব্বার কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর আর্থ সামাজিক ও জীবন মানোন্নয়নের লক্ষ্যে বদলগাছীতে বকনা বাছুর বিতরণ  বাঘায় অসহায় পরিবার পেল ঈদের উপহার  দৌলতপুরে ভিজিএফের ৬০ বস্তা চাল লুট, এক যুবককে জেল-জরিমানা বুড়িচং প্রেসক্লাবের মাসিক সভা অনুষ্ঠিত  ঈদুল আযহা উপলক্ষে গৌরনদী উপজেলা সড়ক উল্লাপাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ফয়সাল কাদের  রুমি গ্রেফতার যুক্তরাজ্য তাঁতীলীগের বিক্ষোভ সমাবেশে ড. ইউনূসকে লন্ডনে অবাঞ্ছিত ঘোষণা, শেখ হাসিনার সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি,   

নীরবে আলো ছড়ানো ভাসমান হাসপাতাল কালীগঞ্জে শীতলক্ষ্যা পাড়ে জীবন তরী     

নীরবে আলো ছড়ানো ভাসমান হাসপাতাল কালীগঞ্জে শীতলক্ষ্যা পাড়ে জীবন তরী     

 

তৈয়বুর রহমান (কালীগঞ্জ) গাজীপুর : নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ। আর এই দেশের নদীর পার ধরে ভেসে বেড়াচ্ছে একটি হাসপাতাল। ভাবতে অবাক লাগলেও এটি চালু আছে প্রায় তিন দশক ধরে। ভাসমান একটি জাহাজের ওপর প্রতিষ্ঠিত দাতব্য হাসপাতাল ‘জীবন তরী’।

দেশের বিভিন্ন নদী ঘুরে ভাসমান হাসপাতাল ‘জীবন তরী’ এখন গাজীপুরের কালীগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে। কালীগঞ্জ পৌর এলাকার দড়িসোম গ্রামের খেয়াঘাট সংলগ্ন খাদ্য গুদামের সামনে স্থানীয় বাসিন্দাদের নাম মাত্র ফি- তে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে জীবন তরীর চিকিৎসা স্থানীয়দের মধ্যে সাড়া ফেলেছে। স্বল্প খরচে মানসম্মত চিকিৎসা পেয়ে প্রান্তিক লোকজন সন্তুষ্ট।

হাসপাতালটি ১২ শয্যার। এতে তিনজন চিকিৎসক দিয়ে নাক, কান, গলা ও চক্ষু চিকিৎসা ও বিশেষজ্ঞ সার্জন দিয়ে অস্ত্রোপচার এবং হাড়জোড়া, হাড়ভাঙ্গা,পঙ্গু, জন্মগত ঠোঁটকাটা-তালুকাটা রোগীদের চিকিৎসা, প্লাস্টিক সার্জারিসহ অন্যান্য চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংস্থাটি ১৯৯৩ সালের ২৫ জুলাই ট্রাস্ট হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছে। ইমপ্যাক্ট ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ১৯৯৯ সালের এপ্রিল মাসে ‘জীবন তরী’ নামে পরিচিত। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এ ধরনের একটি ভাসমান হাসপাতাল চালু করে। দেশের প্রধান প্রধান নদী ধারের মানুষ, যারা শহর বা নগরে খুব কমই যেতে পারে, তাদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

সূত্র আরো জানায়, বেসরকারি সংস্থা ইমপ্যাক্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের পরিচালনাধীন হাসপাতালটি শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে নোঙর ফেলে গত ৬ মে। চিকিৎসা সেবা শুরু করে ১০ মে থেকে। সুচিকিৎসা প্রদান করে ইতোমধ্যে এলাকাবাসীর আস্থা অর্জন করেছে। সুনাম ছড়িয়ে পড়ছে এলাকার বিভিন্ন প্রান্তে। এর আগেও, ভাসমান এ হাসপাতাল জীবন তরী কালীগঞ্জের শীতলক্ষ্যা পাড়ে ২০১৩ ও ২০১৮ সালে দুইবার নোঙর করে স্থানীয়দের চিকিৎসা সেবা দিয়ে গেছে।

ভাসমান হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা বলেন, মানুষ হাসপাতালে যায় চিকিৎসা নিতে, কিন্তু হাসপাতাল রোগীর বাড়ির ঘাটে আসে, তা আগে দেখিনি। দেখলাম, চিকিৎসা নিলাম। সবকিছুই ভালো লেগেছে।

এই হাসপাতালে চোখের চিকিৎসা করানো কালীগঞ্জ পৌর এলাকার দুর্বাটি গ্রামের নাসির উদ্দিন বলেন, আমার ডান চোখে ছানি ছিলো। বেশ কয়েক জায়গায় চিকিৎসা নিয়েছেন। পুরোপুরি ভালো হয়নি। কিছুদিন আগে ভাসমান হাসপাতালে চোখে অস্ত্রোপচার করিয়েছি। এখন আর চোখে সমস্যা নেই। শুধু তিনি নন তার মত অনেকেই এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সন্তুষ্ট।

সূত্রে জানা গেছে, ভাসমান হাসপাতালে প্রতিদিনই ১৬০ থেকে ১৭০ জন দরিদ্র নারী-পুরুষ ও শিশু দূরদূরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে আসেন। চিকিৎসক দল যতেœর সঙ্গে তাঁদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। চিকিৎসা নিতে আসা এসব সুবিধাবঞ্চিত রোগী চিকিৎসকদের সেবায় মুগ্ধ।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, হাসপাতালটি ১২ শয্যার। চিকিৎসক তিনজন। এর মধ্যে একজন নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ, একজন চোখের, একজন অর্থোপেডিকসের। তিনজন নার্স, দুজন কর্মকর্তাসহ মোট ৩০ জন জনবল আছে হাসপাতালে। মুমূর্ষু রোগীদের আনা-নেওয়ার জন্য একটি স্পিডবোট ও একটি এ্যাম্বুলেন্স আছে। এখানে নিয়মিত এক্সরে, রক্তসহ নাক-কান-গলা, চোখ অর্থোপেডিকস রোগের যাবতীয় পরীক্ষা করার ব্যবস্থা আছে।

হাসপাতালটিতে স্বল্পমূল্যে চক্ষু রোগের চিকিৎসা করা হয়। লেন্স সংযোজনের মাধ্যমে চোখের ছানি অস্ত্রোপচার করা হয়। ভাসমান হাসপাতালে ফ্যাকো সার্জারিরও ব্যবস্থা আছে। পঙ্গ রোগীদের সহায়ক সামগ্রী দেওয়া হয়।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, বাইরের একটি ঘর থেকে রোগীরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ৫০ টাকা দিয়ে টিকিট সংগ্রহ করছেন। আবার সারিতে দাঁড়িয়ে ভাসমান হাসপাতালের সিঁড়ি দিয়ে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন। হাসপাতালের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, অন্য হাসপাতালের মতো এখানে স্বল্প পরিসরে সবই আছে। অপারেশন থিয়েটার, পোস্ট অপারেটিভ রুম, রোগীদের শয্যাসহ অন্যান্য সুবিধা আছে।

এ বিষয় জানতে চাইলে হাসপাতালের প্রশাসক এ. কে. এম. শহিদুল হক বলেন, এ পর্যন্ত ভাসমান হাসপাতালটিতে স্বল্পমূল্যে প্রতিদিন দেড় শতাধিক রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চক্ষুরোগ, ইএনটি, অর্থোপেডিক ও ঠোঁটকাটা রোগের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ভাসমান এই হাসপাতালে সরকারি ছুটি ও শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়।

 

আপলোডকারীর তথ্য

news room

জনপ্রিয় সংবাদ

বেলকুচিতে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধী কিশোরীকে ধর্ষণ ও ভয় দেখিয়ে গর্ভপাতের অভিযোগ 

নীরবে আলো ছড়ানো ভাসমান হাসপাতাল কালীগঞ্জে শীতলক্ষ্যা পাড়ে জীবন তরী     

আপডেট সময় ০৩:১৬:১৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১ জুন ২০২৫

 

তৈয়বুর রহমান (কালীগঞ্জ) গাজীপুর : নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ। আর এই দেশের নদীর পার ধরে ভেসে বেড়াচ্ছে একটি হাসপাতাল। ভাবতে অবাক লাগলেও এটি চালু আছে প্রায় তিন দশক ধরে। ভাসমান একটি জাহাজের ওপর প্রতিষ্ঠিত দাতব্য হাসপাতাল ‘জীবন তরী’।

দেশের বিভিন্ন নদী ঘুরে ভাসমান হাসপাতাল ‘জীবন তরী’ এখন গাজীপুরের কালীগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে। কালীগঞ্জ পৌর এলাকার দড়িসোম গ্রামের খেয়াঘাট সংলগ্ন খাদ্য গুদামের সামনে স্থানীয় বাসিন্দাদের নাম মাত্র ফি- তে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে জীবন তরীর চিকিৎসা স্থানীয়দের মধ্যে সাড়া ফেলেছে। স্বল্প খরচে মানসম্মত চিকিৎসা পেয়ে প্রান্তিক লোকজন সন্তুষ্ট।

হাসপাতালটি ১২ শয্যার। এতে তিনজন চিকিৎসক দিয়ে নাক, কান, গলা ও চক্ষু চিকিৎসা ও বিশেষজ্ঞ সার্জন দিয়ে অস্ত্রোপচার এবং হাড়জোড়া, হাড়ভাঙ্গা,পঙ্গু, জন্মগত ঠোঁটকাটা-তালুকাটা রোগীদের চিকিৎসা, প্লাস্টিক সার্জারিসহ অন্যান্য চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংস্থাটি ১৯৯৩ সালের ২৫ জুলাই ট্রাস্ট হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছে। ইমপ্যাক্ট ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ১৯৯৯ সালের এপ্রিল মাসে ‘জীবন তরী’ নামে পরিচিত। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এ ধরনের একটি ভাসমান হাসপাতাল চালু করে। দেশের প্রধান প্রধান নদী ধারের মানুষ, যারা শহর বা নগরে খুব কমই যেতে পারে, তাদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

সূত্র আরো জানায়, বেসরকারি সংস্থা ইমপ্যাক্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের পরিচালনাধীন হাসপাতালটি শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে নোঙর ফেলে গত ৬ মে। চিকিৎসা সেবা শুরু করে ১০ মে থেকে। সুচিকিৎসা প্রদান করে ইতোমধ্যে এলাকাবাসীর আস্থা অর্জন করেছে। সুনাম ছড়িয়ে পড়ছে এলাকার বিভিন্ন প্রান্তে। এর আগেও, ভাসমান এ হাসপাতাল জীবন তরী কালীগঞ্জের শীতলক্ষ্যা পাড়ে ২০১৩ ও ২০১৮ সালে দুইবার নোঙর করে স্থানীয়দের চিকিৎসা সেবা দিয়ে গেছে।

ভাসমান হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা বলেন, মানুষ হাসপাতালে যায় চিকিৎসা নিতে, কিন্তু হাসপাতাল রোগীর বাড়ির ঘাটে আসে, তা আগে দেখিনি। দেখলাম, চিকিৎসা নিলাম। সবকিছুই ভালো লেগেছে।

এই হাসপাতালে চোখের চিকিৎসা করানো কালীগঞ্জ পৌর এলাকার দুর্বাটি গ্রামের নাসির উদ্দিন বলেন, আমার ডান চোখে ছানি ছিলো। বেশ কয়েক জায়গায় চিকিৎসা নিয়েছেন। পুরোপুরি ভালো হয়নি। কিছুদিন আগে ভাসমান হাসপাতালে চোখে অস্ত্রোপচার করিয়েছি। এখন আর চোখে সমস্যা নেই। শুধু তিনি নন তার মত অনেকেই এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সন্তুষ্ট।

সূত্রে জানা গেছে, ভাসমান হাসপাতালে প্রতিদিনই ১৬০ থেকে ১৭০ জন দরিদ্র নারী-পুরুষ ও শিশু দূরদূরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে আসেন। চিকিৎসক দল যতেœর সঙ্গে তাঁদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। চিকিৎসা নিতে আসা এসব সুবিধাবঞ্চিত রোগী চিকিৎসকদের সেবায় মুগ্ধ।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, হাসপাতালটি ১২ শয্যার। চিকিৎসক তিনজন। এর মধ্যে একজন নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ, একজন চোখের, একজন অর্থোপেডিকসের। তিনজন নার্স, দুজন কর্মকর্তাসহ মোট ৩০ জন জনবল আছে হাসপাতালে। মুমূর্ষু রোগীদের আনা-নেওয়ার জন্য একটি স্পিডবোট ও একটি এ্যাম্বুলেন্স আছে। এখানে নিয়মিত এক্সরে, রক্তসহ নাক-কান-গলা, চোখ অর্থোপেডিকস রোগের যাবতীয় পরীক্ষা করার ব্যবস্থা আছে।

হাসপাতালটিতে স্বল্পমূল্যে চক্ষু রোগের চিকিৎসা করা হয়। লেন্স সংযোজনের মাধ্যমে চোখের ছানি অস্ত্রোপচার করা হয়। ভাসমান হাসপাতালে ফ্যাকো সার্জারিরও ব্যবস্থা আছে। পঙ্গ রোগীদের সহায়ক সামগ্রী দেওয়া হয়।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, বাইরের একটি ঘর থেকে রোগীরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ৫০ টাকা দিয়ে টিকিট সংগ্রহ করছেন। আবার সারিতে দাঁড়িয়ে ভাসমান হাসপাতালের সিঁড়ি দিয়ে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন। হাসপাতালের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, অন্য হাসপাতালের মতো এখানে স্বল্প পরিসরে সবই আছে। অপারেশন থিয়েটার, পোস্ট অপারেটিভ রুম, রোগীদের শয্যাসহ অন্যান্য সুবিধা আছে।

এ বিষয় জানতে চাইলে হাসপাতালের প্রশাসক এ. কে. এম. শহিদুল হক বলেন, এ পর্যন্ত ভাসমান হাসপাতালটিতে স্বল্পমূল্যে প্রতিদিন দেড় শতাধিক রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চক্ষুরোগ, ইএনটি, অর্থোপেডিক ও ঠোঁটকাটা রোগের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ভাসমান এই হাসপাতালে সরকারি ছুটি ও শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়।